'নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের নামায আদায়ের পদ্ধতি'
মূল আরবীঃ শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ্ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ্
সাবেক প্রধান, ইসলামী গবেষণা, ইফতা, দাওয়াত ও এরশাদ বিভাগ, রিয়াদ, সৌদি আরব।
অনুবাদঃ আব্দুন্ নূর বিন আব্দুল জব্বার
সম্পাদনাঃ মোঃ জাকির হোসেন


ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ .
যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ জন্যএবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বান্দাহ্ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবাগণের প্রতি।আমি প্রত্যেক মুসলমান নারী ও পুরুষের উদ্দেশ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের নামায আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করতে ইচ্ছা করছি। এর উদ্দেশ্য হলো যে, যারা পুস্তিকাটি পাঠ করবেন তারা যেন প্রত্যেকেই নামায পড়ারবিষয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করতে পারেন। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ

(( ﺻَﻠُّﻮْﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻤُﻮْﻧِﻲْ ﺃُﺻَﻠِّﻲْ (( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ

অর্থঃ ((তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর, যে ভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।)) [বুখারী]

পাঠকের উদ্দেশ্যে(নিম্নে) তা বর্ণনা করা হলোঃ-

১. সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে ওযু করবেঃ আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে যেভাবে ওযু করার নির্দেশ প্রদান করেছেন সেভাবে ওযু করাই হলো পরিপূর্ণ ওযু।আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতা'আলা এ সম্পর্কে এরশাদ করেনঃ

(( ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫَﺍ ﻗُﻤْﺘُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼﺓِﻓﺎﻏْﺴِﻠُﻮﺍْ ﻭُﺟُﻮْﻫَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻳْﺪِﻳَﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺮَﺍﻓِﻖِ ﻭَﺍﻣْﺴَﺤُﻮﺍْﺑِﺮُﺅُﻭﺳِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻠَﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﻴْﻦِ (( ‏[ ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : 6 ]

অর্থঃ ((হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পাগুলোকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল।)) [সূরাআল-মায়েদাহঃ ৬]

নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ

(( ﻻَ ﺗُﻘْﺒَﻞُ ﺻَﻼَﺓٌ ﺑِﻐِﻴْﺮِ ﻃَﻬُﻮْﺭٍ ﻭَﻻَﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻣِﻦْ ﻏُﻠُﻮْﻝٍ ))

অর্থঃ ((পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল করা হয় না। আর খেয়ানতকারীর দান গ্রহণ করাহয় না।)) ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু'আলইহিওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাযে ভুল করার কারণে বললেনঃ

(( ِﺇﺫَﺍ ﻗُﻤْﺖَ ﺇِﻟﻰَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻓَﺄَﺳْﺒِﻎِ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮْﺀَ ))

অর্থঃ ((তুমি যখন নামযে দাঁড়াবে (নামাযের পূর্বে) উত্তম রূপে ওযু করবে।))


২. মুসল্লী বা নামাযী ব্যক্তি কেবলামুখী হবেঃ সে যে কোন জায়গায় থাক না কেন,তার সমস্ত শরীর ও মনকে যে ফরয বা নফল নামায আদায়ের ইচ্ছা করছে, অন্তরকে সেনামাযের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে। এবং মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করবেনা, কারণ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বা তা বিদ'আত। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ কেউ মুখেনিয়্যত উচ্চারণ করেননি । সুন্নত হলো যে, নামাযী তিনি ইমাম হয়ে নামায আদায় করুন অথবা একা, তার সামনে সুত্রাহ (নামাযের সময় সামনে স্থাপিত সীমাচিহ্ন) রেখে নামায পড়বেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু'আলইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সামনে সুত্রাহ ব্যবহার করে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিবলামুখী হওয়া নামাযের শর্ত। তবে কোন কোন বিশেষ অবস্থা তার ব্যতিক্রম যা সুবিদিত বা সবার জানা এবং এ বিষয়ে আহলে ইলমদের কিতাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


৩. তাকবীরে তাহরীমাহঃ আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামাযেদাঁড়াবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখবে।


৪. তাকবীরে তাহরীমায় হাত উত্তোলনঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাতকে কাঁধ অথবা কানের লতি বরাবর উঠাবে।


৫. বুকে হাত বাঁধাঃ এরপর ডান হাতের তালুকে বাম হাতের উপরের কব্জি অথবা বাহু ধারণ করে উভয় হাতকে বুকের উপর রাখবে। বুকের উপর হাত রাখা সম্পর্কে সাহাবী অয়েল ইবনে হুজর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু এবং কাবীসাহ্ ইবনে হুলব আততায়ী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু, তিনি তার পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।


৬. সানা পড়াঃ দো'আ ইস্তেফ্তাহ (সানা) পাঠ করা সুন্নাত। দো'আ ইস্তেফ্তাহ নিম্নরূপঃ

(( ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﻋِﺪْ ﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺧَﻄَﺎﻳﺎَﻱَ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﻋَﺪﺕَّ ﺑَﻴْﻨَﺎﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ . ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻘِّﻨِﻲْ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻨَﻘَّﻰ ﺍﻟﺜَّﻮْﺑُﺎﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪَّﻧَﺲِ . ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﺴِﻠْﻨِﻲْ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ﺑِﺎﻟْﻤَﺎﺀِﻭَﺍﻟﺜَّﻠْﺞِ ﻭَﺍﻟْﺒَﺮْﺩِ . ))

উচ্চারণঃ((আল্লা-হুম্মা বা-'ইদ বাইনী ওয়া বাইনাখাতা-ইয়া-য়া, কামা- বা-'আদ্তা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী- মিনখাতা-ইয়া-য়াকামা- ইউনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্দানাসি,আল্লা-হুম্মাগসিলনী- মিন খাতা-ইয়া-য়া বিল মা-য়ি,ওয়াছ্ছালজি, ওয়াল বারদি।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপগুলো থেকে এত দূরে রাখ যেমন পূর্ব ও পশ্চিম পরস্পরকে পরস্পর থেকে দূরে রেখেছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার করে দাও,যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমারপাপ হতে (পবিত্র করার জন্য) পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও।)) [বুখারী ও মুসলিম]অন্য এক হাদীসে আবু হোরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনাকরেন যে, যদি কেউ চায় তাহলে পূর্বের দো'আর পরিবর্তে নিম্নের দো'আটিও পাঠ করতে পারে। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা পাঠ করার প্রমাণ রয়েছে-

(( ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﻭَﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﺍﺳْﻤُﻜَﻮَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺟَﺪُّﻙَ ﻭَﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﻏَﻴْﺮُﻙَ ))

উচ্চারণঃ((সোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা,ওয়াতাবারাকাস্মুকা, ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহাগাইরুকা।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা'বূদ নেই।))

পূর্বের দো'আ দু'টি ছাড়াও যদি কেউ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত অন্যান্য যে সমস্ত দো'আয়ে ইস্তেফ্তাহ বা সানা রয়েছে, তা পাঠ করে তবে কোন বাধা নেই। কিন্তু উত্তম হলো যে, কখনও এটি আবার কখনও অন্যটি পড়া। কারণ এর মাধ্যমে রাসূলসাল্লাল্লাহু'আলইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ প্রতিফলিত হবে।এরপর বলবেঃ

((আ'উযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত-নির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।))

অর্থঃ ((আমি বিতাড়িত শয়তানথেকে আল্লাহ্ কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।))

অতঃপর সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

(( ﻻَ ﺻَﻼَﺓَ ﻟِﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ))

অর্থঃ ((যে ব্যক্তি (নামাযে( সূরা ফতিহা পাঠ করে না তার নামায হয় না।)) [বুখারী ওমুসলিম]

সূরা ফতিহা পাঠ শেষে জাহরী নামাযে (যেমনঃ মাগরিব, এশা ও ফজর( উচ্চস্বরে আওয়াজ করে এবং ছির্রি নামাযে (যেমনঃ জোহর ও আসর( মনেমনে আ-মীন বলবে।

এরপর পবিত্র কুরআন থেকে যেপরিমাণ সহজসাধ্য হয় পাঠ করবে। উত্তম হলো যে, জোহর, আসর এবং এশার নামাযে কুরআন মজিদের আওছাতে মুফাচ্ছাল [সূরা নাস থেকেসূরা দোহা পর্যন্ত এবং ফজরে তেওয়াল [সূরা কাফ থেকে সূরানাবা পর্যন্ত] আর মাগরিবে কিসার [সূরা দোহা থেকে সূরা নাসপর্যন্ত] থেকে পাঠ করা। মাগরিব নামাযে কখনও তেওয়াল অথবা আওসাত থেকে পাঠ করবে। এভাবে পাঠ করা নবী কারীমসাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আসরের কিরআতকে জোহর এর কিরআত থেকে হালকা করা জায়েয আছে।


৭. রুকূঃ উভয় হাত দু'কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যাবে। মাথাকে পিঠ বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাঁটুর উপরে রাখবে। রুকূতে ইতমিনান বা স্থিরতা অবলম্বন করবে। এরপর বলবেঃ ((সুবহানা রাব্বি'আল 'আজীম))। অর্থঃ ((আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)) দো'আটি তিন বা তার অধিক পড়া ভাল এবং এর সাথে নিম্নের দো'আটিও পাঠ করা মুস্তাহাব-জায়েয।

(( ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨﺎَ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻛَﺎَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ))

উচ্চারণঃ ((সোবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলি।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! আমাদের প্রতিপালক,তোমার পবিত্রতাবর্ণনা করছি তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর।))

৮. রুকূ থেকে উঠাঃউভয় হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে ((সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্)) বলে রুকূ থেকে মাথা উঠাবে। ইমাম বা একাকী উভয়ই দো'আটি পাঠ করবে। রুকূ থেকে খাড়া হয়ে বলবেঃ

(( ﺭَﺑَّﻨَﺎﻭَﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ،ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴْﺮًﺍﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎِﻓﻴْﻪِ؛ ﻣِﻞْﺀَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَ ﻣِﻞْﺀَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ؛ ﻭَﻣِﻞَﺀَ ﻣﺎَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ؛ ﻭَﻣِﻞْﺀَ ﻣﺎَ ﺷِﺌْﺖَ ﻣِﻨْﺸَﻲْﺀٍ ﺑَﻌْﺪُ . ))

উচ্চারণঃ((রাব্বানা- ওয়া লাকাল হামদ্, হামদান্ কাছী-রান্ তাইয়্যেবাম্ মুবা-রাকান ফি-হ, মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল্আল্ 'আরদি, ওয়া মিল্আ মা বাইনাহুমা, ওয়া মিল্আ মা শি'তা মিন শাইয়িম বা'দু।))

অর্থঃ ((হে আমাদের প্রতিপালক!তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। তোমার প্রশংসা অসংখ্য, উত্তম ও বরকতময়, যা আকাশ ভর্তি করে দেয়,যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয়, উভয়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণকরে এবং এগুলো ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তাও পূর্ণ করে দেয়।))

পূর্বের দো'আটির পরে যদি নিম্নের দো'আটিও পাঠ করা হয় তাহলে ভাল-

(( ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺜَّﻨَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺠْﺪِ؛ ﺃَﺣَﻖُّ ﻣَﺎﻗﺎَﻝَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ؛ ﻭَﻛُﻠُّﻨﺎَﻟَﻚَ ﻋَﺒْﺪٌ؛ ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻻَﻣَﺎﻧِﻊَ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻋْﻄَﻴْﺖَ ﻭَﻻَ ﻣُﻌْﻄِﻰَ ﻟِﻤَﺎﻣَﻨَﻌْﺖَ ﻭَﻻَﻳَﻨْﻔَﻊُ ﺫَﺍﻟْﺠَﺪِّ ﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟْﺠَﺪُّ .))

উচ্চারণঃ((আহলুস্ সানা-য়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কা-লাল 'আবদু, ওয়া কুল্লানা- লাকা 'আব্দুন। আল্লা-হুম্মা! লা- মা-নি'আ লিমা- আ'তাইতা ওয়ালা- মু'তিয়া লিমা- মানা'তা, ওয়ালা ইয়ানফা'উযাল্ জাদ্দি মিনকাল্ জাদ্দু।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদার হক্কদার, বান্দাহ যা বলে তার চেয়েও তুমি অধিকতর হকদার। এবং আমরা সকলে তোমারই বান্দাহ্। হে আল্লাহ্! তুমি যা দান করেছো, তার প্রতিরোধকারী কেউ নেই। আর তুমি যা নিষিদ্ধ করেছো তা প্রদানকারীও কেউ নেই। এবং কোন সম্মানী ব্যক্তি তারউচ্চ মর্যাদা দ্বারা তোমার দরবারে উপকৃত হতে পারবে না।))কোন কোন সহীহ্ হাদীসে নবীকারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই (পূর্বের) দো'আটি পড়া প্রমাণিত আছে। আর মুকতাদী হলে রুকূ থেকে উঠার সময় ((রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ. . . . .)) দো'আটি শেষ পর্যন্ত পড়বে। রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর ইমাম ও মুকতাদী সকলের জন্য দাড়ানো অবস্থায় যে ভাবে উভয় হাত বুকের উপর ছিল সে ভাবে বুকের উপর উভয়হাত রাখা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অয়েল ইবনে হুজর এবং সাহল বিন সা'দ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা -এরবর্ণিত হাদীস থেকে প্রমাণিত।


৯. সিজদাহঃ((আল্লাহু আকবার)) বলে যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় তা হলে দুই হাটু উভয় হাতের আগে (মাটিতে রেখে)সিজদায় যাবে।আর কষ্ট হলেউভয় হাত হাটুর পূর্বে (মাটিতে) রাখা যাবে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি কিব্লামুখী থাকবে। এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিত ও প্রসারিত হয়ে থাকবে। সিজদাহ্ হবেসাতটি অঙ্গেরউপর। অঙ্গগুলো হলোঃনাক সহ কপাল,উভয় হাতুলী, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়েরআঙ্গুলেরভিতরের অংশ।সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ((সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা)) অর্থঃ ((আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের[আল্লাহর] প্রশংসা করছি।)) তিন বা তার অধিকবার তা পুনরাবৃত্তি করবে। এর সাথে নিম্নের দো'আটি পড়া মুস্তাহাব-

(( ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨﺎَ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻲْ ))

উচ্চারণঃ((সোবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলি।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! আমাদের প্রতিপালক, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ্!আমাকে ক্ষমা কর।))

সিজদায় বেশি বেশি দো'আ করা মুস্তাহাব। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহিওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ

(( ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻓﻌﻈﻤﻮﺍ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺮﺏ ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻓﺎﺟﺘﻬﺪﻭﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻓﻘﻤﻦ ﺃﻧﻴﺴﺘﺠﺎﺏ ))

অর্থঃ ((তোমরা রুকূ অবস্থায় মহান প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ওমহত্ব বর্ণনা কর এবং সিজদারত অবস্থায় অধিক দো'আ পড়ার চেষ্টা কর, কেননা তোমাদের দো'আ' কবুল হওয়ার উপযোগী।)) [মুসলিম]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদকরেনঃ

(( ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮْﻥُ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺳَﺎﺟِﺪٌﻓَﺄَﻛْﺜِﺮُﻭْﺍ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ . ))

অর্থঃ ((বান্দাহ্ সিজদাহ্ অবস্থায় তার প্রতিপালকের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব এই অবস্থায় তোমরা বেশি বেশি দো'আ করবে।)) [মুসলিম]

ফরয অথবা নফল উভয় নামাযে মুসলিম [নামাযী] সিজদার মধ্যে তার নিজের এবং মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্ কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দো'আ করবে। সিজদার সময় উভয় বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে, পেটকে উভয় উরু এবং উভয় উরু পিন্ডলী থেকে আলাদা রাখবে। এবং উভয় বাহু [কনুই] মাটি থেকে উপরে রাখবে। (কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম কুনইকে মাটির সাথে লাগাতে নিষেধ করেছেন।) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ

(( ﺍِﻋْﺘَﺪِﻟُﻮْﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴُّﺠُﻮْﺩِ ﻭَﻻَﻳﺒﺴِﻄُﺄَﺣْﺪُﻛُﻢْ ﺫِﺭَﺍﻋَﻴْﻪِ ﺇِﻧْﺒِﺴَﺎﻁَ ﺍﻟْﻜَﻠْﺐِ ((. ‏[ ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ]

অর্থঃ ((তোমরা সিজদায় বরাবর সোজা থাকবে। তোমাদের কেউযেন তোমাদের উভয় হাতকে কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে প্রসারিত না রাখে।)) [বুখারী ও মুসলিম]


১০. সিজদা থেকে উঠাঃ((আল্লাহু আকবার)) বলে (সিজদাহ থেকে) মাথা উঠাবে। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। দু'হাত তার উভয় রান (উরু) ও হাঁটুর উপর রাখবে। এবং নিম্নের দো'আটি বলবে-

(( ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻲْ؛ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻲْ؛ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻲْ؛ ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﻲْ،ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲْ ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲْ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲْ ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲْ ﻭَﺍﺟْﺒُﺮْﻧِﻲْ .))

উচ্চারণঃ((রব্বিগ্ ফিরলী-, রব্বিগ্ ফিরলী-, রব্বিগ্ ফিরলী-, আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলী-, ওয়ারহামনী-, ওয়াহদিনী-, ওয়ারযোকনী-, ওয়া 'আ-ফিনী-, ওয়াজবুরনী-।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! আমাকেক্ষমা কর, হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর,হে আল্লাহ্!আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে সুস্থ্যতা দান কর এবং আমার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ কর।))এই বৈঠকে ধীর স্থির থাকবে যাতে প্রতিটি হাড়ের জোর তার নিজস্ব স্থানে ফিরে যেতে পারে রুকূর পরের ন্যায় স্থির দাঁড়ানোর মতো। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম রুকূর পরে ওদু'সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে স্থিরতা অবলম্বন করতেন।


১১. দ্বিতীয় সিজদাহঃ ((আল্লাহুআকবার)) বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় তাই করবে প্রথম সিজদায় যা করেছিলে।


১২. আরামের বৈঠকঃ সিজদাহ থেকে((আল্লাহু আকবার)) বলে মাথা উঠাবে। ক্ষণিকের জন্য বসবে, যে ভাবে উভয় সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসেছিল। এ ধরনের পদ্ধতিতে বসাকে ((জলসায়ে ইসতেরাহা)) বাআরামের বৈঠক বলা হয়।আলেমদের দু'টি মতের মধ্যে অধিক সহীহ্ মতানুসারে এ ধরনের বসা মুস্তাহাব এবং তাছেড়ে দিলে কোন দোষ নেই। ((জলসায়ে ইস্তেরাহা)) এ পড়ার জন্য (নির্দিষ্ট) কোন দো'আ নেই।অতঃপর দ্বিতীয় রাক'আতের জন্য যদি সহজ হয় তাহলে উভয় হাঁটুতে ভর করে উঠে দাঁড়াবে। তার প্রতি কষ্ট হলে উভয় হাত মাটিতে ভর করে দাঁড়াবে।

এরপর (প্রথমে)সূরা ফাতিহা এবং কুরআনের অন্য কোন সহজ সূরাপড়বে। প্রথম রাকআতে যেভাবে করেছে ঠিকসে ভাবেই দ্বিতীয় রাকআতেও করবে। মুকতাদী তার ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা জায়েয নেই। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ রকমকরা থেকে সতর্ক করেছেন। ইমামের সাথে সাথে (একই সঙ্গে) করা মাকরূহ। সুন্নাত হলো যে, মুকতাদীর প্রতিটি কাজ কোন শিথিলতা না করে ইমামের আওয়াজ শেষ হওয়ার সাথে হবে। এ সম্পর্কে নবী করীমসাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ

(( ﺇﻧﻤﺎ ﺟﻌﻞ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻟﻴﺆﺗﻢ ﺑﻪ ﻓﻼ ﺗﺨﺘﻠﻔﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ؛ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺒﺮ ﻓﻜﺒﺮﻭﺍ؛ﻭﺇﺫﺍ ﺭﻛﻊ ﻓﺎﺭﻛﻌﻮﺍ؛ ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ، ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ؛ ﻭﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪ ﻓﺎﺳﺠﺪﻭﺍ . ((‏[ ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ]

অর্থঃ ((ইমামএই জন্যই নির্ধারণ করা হয়, যাতে তাকে অনুসরণ করা হয়,তার প্রতি তোমরা ইখতেলাফ করবে না।সুতরাং ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলবে তোমরাও "আল্লাহু আকবার" বলবে এবং যখন তিনি রুকূ করবেন তোমরাও রুকূ করবে এবং তিনি যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলবেন তখন তোমরা "রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ" বলবে আর ইমাম যখন সিজদাহ করবেন তোমরাও সিজদাহ করবে।))[বুখারী ও মুসলিম]


১৩. প্রথম বৈঠকঃ নামায যদি দু'রাক্আত বিশিষ্ট হয় যেমনঃ ফজর,জুমআ ও ঈদের নামায, তা'হলে দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসবে। ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুলি ছাড়া সমস্ত আঙ্গুলমুষ্টিবদ্ধ করে দো'আ ও আল্লাহর নাম উল্লেখ করার সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা নাড়িয়ে তাওহীদেরইশারাহ্ করবে। যদি ডান হাতের কনিষ্ঠা ওঅনামিকা বন্ধ রেখে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমাঙ্গুলির সাথে মিলিয়ে গোলাকার করে শাহাদাত বা তর্জনী দ্বারা ইশারা করে তবে তাভাল। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু'ধরনের বর্ণনাই প্রমাণিত। উত্তম হলো যে, কখনও এভাবে এবং কখনও ওভাবে করা। এবং বাম হাত বাম উরু ও হাঁটুর উপর রাখবে।

অতঃপর এই বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যতু) পড়বে। তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়্যতুঃ

(( ﺍَﻟﺘَّﺤِﻴَّﺎﺕُ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺗُﻮَﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕُ، ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻬِﻮَﺑَﺮَﻛَﺎﺗُﻪُ، ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻋِﺒَﺎﺩِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴْﻦَ، ﺃَﺷْﻬَﺪُﺃَﻥ ﻟَّﺎﺇِﻟَﻬَﺈِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ .))

উচ্চারণঃ((আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যিবা-তু আস্ সালা-মু 'আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু, আস্ সালামু 'আলাইনা- ওয়া আলা- 'ইবাদিল্লা-হিস্ সা-লেহী-ন। আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান্ 'আব্দুহু- ওয়া রাসূলুহ্।))

অর্থঃ ((যাবতীয় ইবাদত, মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্তইআল্লাহ্র জন্য।হে নবী, আপনার উপর আল্লাহর শান্তি,রহমত ও বরকতঅবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া (সত্য) কোন মা'বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।))

অতঃপর [দরূদ] বলবেঃ

(( ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَّﻋَﻠَﻯﺂﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺇِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ , ﻭﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻯﺂﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺁﻝِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺇِﻧَّﻜَﺤَﻤِْﻴﺪٌ ﻣَﺠِﻴْﺪٌ .))

উচ্চারণ: ((আল্লাহুম্মা সল্লি 'আলা- মুহাম্মাদিউঁ ওয়া'আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন,কামা- সল্লাইতা 'আলা- ইব্রা-হী-মা ওয়া আলা- আ-লি ইব্রা-হী-মা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ। ওয়া বা-রিক 'আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া'আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামাবা-রাকতা আলা- ইব্রা-হী-মা ওয়া'আলা- আ-লি-ইব্রা-হী-মা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ।))

অর্থঃ ((হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহিওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর। যেমন তুমি ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত। এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহিওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল কর, যেমন তুমি ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর নাযিল করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও গৌরাবান্বিত।))অতঃপর নিম্নের দো'আটি পড়বেঃ এতে আল্লাহর নিকট চারটি ভয়াবহ বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে-

(( ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻭَﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺑِﺎﻟْﻘَﺒْﺮِ ﻭﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺤْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﻤَﻤَﺎﺕِ ﻭﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴْﺤِﺎﻟﺪَّﺟَّﺎﻝ ))

উচ্চারণঃ((আল্লা-হুম্মা ইন্নী- আ'ঊযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম,ওয়া মিন আযা-বিলক্বাব্রি, ওয়া মিন ফিত্নাতিল্ মাহ্ইয়া- ওয়ালমামা-তি ওয়া মিন ফিত্নাতিলমাসী-হিদ্দাজ্জা-ল।))

অর্থঃ((আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে,কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেৎনা থেকে।))এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গলকামনা করে নিজের পছন্দমত যে কোন দো'আ করবে। ব্যক্তি যদি তার পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুসলমানের জন্য দো'আ করে তাতে কোন দোষ নেই। দো'আ করার বিষয়ে ফরয অথবা নফল সালাতে কোনইপার্থক্য নেই। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের কথায় ব্যাপকতা রয়েছে, ইবনে মাসউদের হাদীসে যখন তিনি তাশাহহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন বলেছিলেনঃ

(( ﺛُﻢَّ ﻟِﻴَﺘَﺨَﻴَّﺮْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪُّﻋﺎَﺀِﺃَﻋْﺠَﺒَﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻔَﻴَﺪْﻋُﻮْﺍ ))

অর্থঃ ((অতঃপরতার কাছে যে দো'আ পছন্দনীয়, তা নির্বাচন করে দো'আ করবে।)) অন্য এক বর্ণনায় আছে,

(( ﺛُﻢَّ ﻳَﺘَﺨَﻴَّﺮْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺴْﺄَﻟَﺔِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺀَ ))

অর্থঃ(( অতঃপর যা ইচ্ছা চেয়ে দো'আ করতে পারে।)) এই দো'আগুলি যেন বান্দাহর দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত বিষয়কে শামিল করে। অতঃপর (নামাযী) তার ডান দিকে (তাকিয়ে)- ﺍﻟﺴﻼﻣﻌﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ((আস্সালা-মু 'আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্)) অর্থঃ ((তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহ্ রহমত বর্ষিত হোক)) এবং বাম দিকে(তাকিয়ে) ((আস্সালা-মু 'আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ্)) বলে ছালাম ফিরাবে বা সালাত সমাপ্ত করবে।


১৪. তিন বা চার রাকা'আত বিশিষ্ট নামাযেঃ নামায যদি তিন রাকা'আত বিশিষ্ট হয় যেমন, মাগরিবের নামায অথবা চার রাকা'আত বিশিষ্ট যেমন, জোহর, আছর ও এশার নামায, তাহলে পূর্বোল্লেখিত ((তাশাহহুদ)) পড়বে এবং এর সাথে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদও পাঠ করা যাবে। অতঃপর ((আল্লাহু আকবার)) বলেহাঁটুতে ভর করে (সোজা হয়ে) দাঁড়িয়ে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে পূর্বের ন্যায় বুকের উপর রাখবে। এবং শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে। যদি কেউ জোহর ও আসরের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকা'আতে কখনও সূরা ফাতিহার পর অতিরিক্ত অন্য কোন সূরা পড়ে ফেলে তবে কোন বাধা নেই। কেননা, এ বিষয়ে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু কতৃক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। প্রথম তাশাহহুদে যদি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করা ছেড়ে দেয় এতেও কোন ক্ষতি নেই। কারণ প্রথম বৈঠকে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।

অতঃপর মাগরিবের নামাযের তৃতীয় রাকা'আত এবং জোহর, আসর ও এশার নামাযের চতুর্থ রাকাআতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করবে আর আল্লাহ্কাছে জাহান্নামের আযাব, কবরের আযাব, জীবিত ও মৃত্যুর ফেৎনা এবং মাসীহে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং বেশি বেশি দো'আ করবে।