তোমাকে বলছি হে যুবক -যৌবনে ইবাদতের গুরুত্ব

যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা, শক্তি-সামর্থ্যে ভরপুর যৌবনের দিনগুলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। যৌবনে আল্লাহতায়ালা আমাদের এমন সব নেয়ামত দান করেন, যার শোকরিয়া আদায় করে শেষ করা কখনোই সম্ভব নয়। আর আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রতিটি মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। তাই আল্লাহর আনুগত্যেই জীবনের সেরা সময়টি অতিবাহিত করা যুবসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

রাসুলুল্লাহ (সা.) যৌবনকে মূল্যায়ন করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। সময় ফুরিয়ে আসার আগে যৌবনের কদর করার জোর তাগিদ দেন তিনি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তিকে নসিহত করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয় আসার আগে পাঁচটি বিষয়ের মূল্যায়ন করো। এক. বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগে যৌবনকে। দুই. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে। তিন. দারিদ্র্য গ্রাস করার আগে স্বনির্ভরতাকে। চার. কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে। পাঁচ. মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩৩১৯)

উপর্যুক্ত হাদিসের যে পাঁচ বিষয়কে মূল্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সব কটি একজন যুবকের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায়। হেলায়-খেলায়, মৌজ-মাস্তিতে জীবনের সোনালি সময় নষ্ট করা সত্যিকারের মুসলমানের কাজ নয়। বরং যুবসমাজের উচিত, ইসলামের নির্দেশনা মেনে, সুন্নাহর আলোয় যৌবনকে রাঙিয়ে তোলা এবং আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

অন্তরের পরিশুদ্ধি

যৌবনের উত্তাল সময়েই গুনাহ ও স্খলনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই যুবকদের প্রয়োজন আত্মার পরিচর্যা ও পরিশুদ্ধি। চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে অবাধ্য মন যেকোনো সময় বিপথগামী হয়ে ওঠে। তাই নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে উন্নত হৃদয় ও মন-মানসের অধিকারী হতে হবে। অন্তর পরিশুদ্ধ করার সুফল এবং কলুষিত করার কুফল বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘যে তার আত্মা পরিশুদ্ধ করেছে সে-ই সফল এবং যে তার আত্মা কলুষিত করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা আশ-শামস, আয়াত : ৮-৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দীর্ঘ হাদিসের শেষাংশে আত্মার শুদ্ধতার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, ‘সাবধান! মানবদেহে একখণ্ড গোশতের টুকরো আছে, যখন তা সুস্থ হয়ে যায় পুরো শরীরটাই সুস্থ হয়ে যায় এবং যখন তা অসুস্থ হয়ে যায় পুরো শরীরই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রেখো, এটাই কলব বা অন্তর।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪১৭৮)

গুনাহমুক্ত জীবন

গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে যৌবন হেফাজত করতে হবে। হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। নজরের হেফাজত যৌবনে খুবই জরুরি। আল্লাহতায়ালা নজর ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।... আর ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

এ ছাড়া যৌবনে নানা অন্যায়-অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই নিজেকে সব ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্নীতি সবই ইসলামে নিষিদ্ধ। যৌবনকে পবিত্র রাখতে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার বিকল্প নেই।

বিয়ে

গুনাহমুক্ত জীবনের পথে বড় প্রতিবন্ধক যৌবনের তাড়না। কারণ নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণ স্বভাবজাত। এ কথারই সত্যায়ন করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৮) তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে নিষিদ্ধ। জৈবিক চাহিদা পূরণে আল্লাহ বিয়ের অনুপম ব্যবস্থা রেখেছেন। পৃথিবীতে মানুষের পরম্পরা রক্ষার এটিই একমাত্র নৈতিক হাতিয়ার। তাই সামর্থ্যবান যুবকদের বিয়ে করা উচিত। বিয়ের প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দোহাই দিয়ে বিলম্ব করা ইসলাম অনুমোদন করে না। অবশ্য একান্ত সামর্থ্য না থাকলে রোজা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন রাসুল (সা.)।

যুবকদের উদ্দেশে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৫)

ইবাদতে মগ্নতা

যৌবনই ইবাদতের সেরা সময়। সামর্থ্যবান মানুষই পারে পূর্ণ মনোযোগসহকারে ইবাদত করতে। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া এবং রাত জেগে দীর্ঘসময় আল্লাহর ইবাদত করা যৌবনকালেই সম্ভব। যৌবনে ইবাদতকারীদের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন রাসুল (সা.) । তিনি বলেন, ‘সাত প্রকারের মানুষকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। এক. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। দুই. আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন যুবক।...’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮০৬)

অতীতে অত্যাচারী বাদশাহর কারণে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে বিঘœ ঘটায় কিছু যুবক গোপন গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কোরআনের ভাষায় তাদের ‘আসহাবে কাহাফ’ নামে অভিহিত করা হয়। আল্লাহতায়ালা তাদের সম্মানে কোরআনে কারিমে স্বতন্ত্র সুরা নাজিল করেন। তাদের ‘যুবক’ আখ্যা দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ইমান এনেছিল এবং আমি তাদের হেদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ১৩)

নেতৃত্ব গ্রহণ

যুবকদেরই সমাজের নেতৃত্ব হাতে নিতে হবে। মানুষকে সত্যের পথে পরিচালিত করতে হবে। এ লক্ষ্যেই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। যৌবনের পরিণত বয়সেই সব নবী-রাসুলকে আল্লাহতায়ালা নবুয়তের গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রিয়নবী (সা.)-কে পাঠানোর উদ্দেশ্য বর্ণনা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদেরই একজনকে তোমাদের রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের কাছে আমার বাণী পাঠ করবেন এবং তোমাদের পরিশুদ্ধ করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তার তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫১) তাই সমাজের নেতৃত্ব গ্রহণে যুবসমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। জাতিকে শিক্ষাদীক্ষায় সমৃদ্ধ করে সামষ্টিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে হবে।

অন্যায়ের প্রতিবাদ

অন্যায়ের প্রতিবাদে যুবসমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। রাসুল (সা.) তার জীবদ্দশায় অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুবসম্প্রদায়কেই নেতৃত্ব ও দায়িত্ব অর্পণ করেন। ইয়াজিদের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে নবীদৌহিত্র যুবক হোসাইন (রা.) জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যুবক বয়সেই নমরুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। মূর্তিপূজাসহ সব অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তারই কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৬০)

হালাল উপার্জন

স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের দেখভাল করা এবং আর্থিক ভরণপোষণ প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের কর্তব্য। তাই তাকে উপার্জন করতে হয়। তবে এই উপার্জন হালাল হওয়া অপরিহার্য। হারাম উপার্জন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুদ, ঘুষ ও গুনাহের কাজ করে উপার্জন ইসলামে বৈধ নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, পৃথিবীতে যেসব হালাল ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে তোমরা আহার করো। শয়তানের দেখানো পথ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৮)

হারাম পথে উপার্জিত খাবারের ভয়াবহতা বর্ণনা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৫৫২০)

পরকাল ভাবনা

যৌবনের রঙিন দিনগুলোতে আমরা পরকালের কথা ভুলে যাই। ভুলে যাই মহান প্রতিপালকের কথা; তার দরবারে জবাবদিহির কথা। মৃত্যুর পর আমাদের সব কাজের জবাব দিতে হবে। তাই যৌবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে অধিক পরিমাণে পরকাল ভাবনা জরুরি। পরকালের ভয় যৌবনকে অপরাধমুক্ত করে।

কেয়ামতের দিন আমাদের যৌবন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন পাঁচ বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগে কোনো মানুষের দুই পা আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে সরতে পারবে না। এক. তার জীবনকাল সম্পর্কে কীভাবে অতিবাহিত করেছে। দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে কী কাজে তা বিনাশ করেছে। তিন. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে। চার. এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে। পাঁচ. সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে তা সম্পর্কে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)



যুবকদের প্রতি ৭৫টি নসীহত

 (যুবকদের প্রতি ৭৫টি নসীহত - কোরান হাদিস থেকে. প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না)




সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি বলেন:
“তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদেরকে আমি নসীহত করেছি এবং তোমাদেরকেও নসীহত করছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা নিসা-১৩১)

নছীহতগুলো নিম্নরূপ:

১. আল্লাহ তায়ালার জন্য নিয়তকে পরিশুদ্ধ করবে। কথায় ও কাজে মানুষের প্রশংসা পাওয়া কিংবা দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য রিয়া পরিত্যাগ করবে।

২. যাবতীয় কথা, কাজ ও আচার-আচরণে মুহাম্মদ মাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করবে।

৩. আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে। যাবতীয় নির্দেশ পালন এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে।
৪. আল্লাহর নিকট খাঁটি ভাবে তওবা করবে। বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

৫. তোমার কথা ও কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথা স্মরণ রাখবে। জেনে রাখ আল্লাহ্‌ তোমাকে দেখেন এবং তোমার হৃদয়ের গোপন খবরও তিনি জানেন।

৬. আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, নবী-রসূলগণের প্রতি এবং শেষ দিবস ও তকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করবে।

৭. বিনা দলীলে কারো তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করবে না।
৮. ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করবে।

৯. (রিয়াযুস্‌ সালেহীন) কিতাবটি সংগ্রহ করবে। নিজে পড়বে পরিবারের অন্যদেরকেও পড়ে শোনাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়েমের (যাদুল মাআদ) গ্রন্থটিও সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। (কিতাব দুটি বাংলায় পাওয়া যায়।)

১০. প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল নাপাকি থেকে সর্বদা পবিত্র থাকবে।

১১. জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করতে সচেষ্ট থাকবে। বিশেষ করে এশা ও ফযর নামায।
১২. দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য পরিত্যাগ করবে। যেমন- কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসূন। এবং ধুমপান করে নিজেকে এবং মুসলমানদেরকে কষ্ট দিবে না।

১৩. জামায়াতের বিশেষ ফজিলত হাসিলের লক্ষ্যে সর্বদা জামায়াতে নামায আদায় করবে।
১৪. ফরয যাকাত আদায় করবে। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে হক্বদারেদের ব্যাপারে কৃপণতা করবে না।

১৫. আগে ভাগে জুমআর নামাযে যাওয়ার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয় আযানের পর মসজিদে আসার অভ্যাস পরিত্যাগ করবে।

১৬. ঈমানের সাথে আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাওয়ার আশায় রমযানের রোযা পালন করবে। এর মাধ্যমে তোমার পূর্বাপর যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

১৭. শরীয়ত সম্মত কোন ওজর ব্যতীত রমযান মাসের কোন একটি রোযাও পরিত্যাগ করবে না। অন্যথা গুনাহগার হয়ে যাবে।

১৮. রমযানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে বিশেষ করে লায়লাতুল ক্বাদরে-ঈমান ও প্রতিদানের আশায় কিয়াম করবে। যাতে করে তোমার পূর্বকৃত পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

১৯. যদি সামর্থবান হয়ে থাক তবে দ্রুত হজ্ব-ওমরার উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর দিকে সফর কর। দেরী করা থেকে সাবধান হও।

২০. পবিত্র কুরআন অর্থসহ পড়ার চেষ্টা কর। কুরআনের আদেশ পালন কর, নিষেধ থেকে দূরে থাক। যাতে করে প্রভুর দরবারে কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হয় এবং কিয়ামত ময়দানে তোমার জন্য সুপারিশ করে।

২১. সর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল থাকবে- প্রকাশ্যে-গোপনে, দাঁড়ানো, বসা ও শোয়াবস্থায়-সর্বদাই। আল্লাহর জিকির থেকে কখনো গাফেল হবে না।

২২. যিক্‌রের মজলিসে (ইলমী অনুষ্ঠানে) বসবে। কেননা এধরণের মজলিস জান্নাতের বাগান।

২৩. হারাম এবং গোপন বিষয় দেখা থেকে তোমার দৃষ্টিকে নত রাখবে। সেদিকে দৃষ্টিপাত থেকে সর্বদা সাবধান থাকবে। কেননা নিষিদ্ধ দৃষ্টি হল শয়তানের পক্ষ থেকে একটি বিষাক্ত তীর।

২৪. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে না। চলাফেরায় কখনো অহংকারী ভাব প্রকাশ করবে না।

২৫. রেশমের কাপড় বা স্বর্ণের কোন কিছু পরিধান করবে না। কেননা তা পুরুষদের জন্য হারাম।

২৬. মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না। আর তোমার পরিবারের কোন মহিলাকেও পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে দেবে না।

২৭. দাড়ি ছেড়ে দাও। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমার গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছেড়ে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)

২৮. হালাল ছাড়া অন্য কিছু ভক্ষণ করবে না এবং হালাল ব্যতীত অন্য কিছু পান করবে না। তাহলে তোমার দুয়া কবুল হবে।

২৯. খানা-পিনার সময় বিসমিল্লাহ্‌ বলবে। শেষ করলে আলহামদু লিল্লাহ বলবে।

৩০. ডান হাতে খানা-পিনা করবে। লেন-দেনের ক্ষেত্রে ডান হাতে গ্রহণ করবে এবং ডান হাতেই প্রদান করবে।

৩১. কারো প্রতি জুলুম করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে জুলুম অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে।

৩২. মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে সাথী হিসেবে গ্রহণ করবে না। আর তোমার খানা যেন ভাল মানুষ ব্যতীত অন্যে না খায়।

৩৩. সাবধান! ঘুষ খাবে না। নিবেও না দিবেও না, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাও করবে না। কেননা এরূপ যে করে সে অভিশপ্ত।

৩৪. আল্লাহ্‌কে নাখোশ করে মানুষের সন্তুষ্টি চেও না। কেননা আল্লাহ তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।

৩৫. শরীয়ত সম্মত প্রতিটি বিষয়ে নেতৃবৃন্দের আনুগত্য করবে এবং তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করবে।

৩৬. সাবধান! কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না। আর সত্য সাক্ষ্যও গোপন করবে না। (যে ব্যক্তি উহা গোপন করবে তার অন্তর পাপী। আর তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পরিজ্ঞাত। (সূরা বাকারা-২৮৩)

৩৭. (সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। আর এক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করবে।) (সূরা লোকমান-১৭।) আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন তাই সৎকাজ এবং তাঁরা যা নিষেধ করেছেন তাই অসৎকাজ।
৩৮. ছোট-বড় সব ধরণের হারাম কাজ পরিত্যাগ কর। কখনো আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করবে না। এক্ষেত্রে কাউকে সহযোগিতাও করবে না।

৩৯. কোন ভাল কাজকেই ছোট মনে করবে না। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোন বস্তু পরিত্যাগ করাটাও একটা ঈমানী কাজ। লজ্জাবোধ ঈমানের অংশ।

৪০. ব্যভিচারের নিকটবর্তী হবে না। আল্লাহ বলেন: ”তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা উহা অশ্লীলতা এবং খুবই নিকৃষ্ট কাজ।” (সুরা বানী ইসরাইল-৩২)

৪১. পিতামাতার সাথে সাদাচার করবে। সাবধান! তাদের কথা অমান্য করবে না যদি না তারা ইসলাম বিরোধী নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তারা যদি ইসলাম বিরোধী কাজের নির্দেশ দেয় তবে অবস্থায়ও ভদ্রতা বজায় রেখে তাদের সে নির্দেশ পালন থেকে বিরত থাকবে।)

৪২. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারে সাবধান হবে।

৪৩. প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাকে কষ্ট দিবে না। সে কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধারণ করবে।

৪৪. সৎ ব্যক্তি এবং ঈমানী ভাইদের সাথে ঘন ঘন সাক্ষাৎ করবে।

৪৫. শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালবাসবে। আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করবে। কেননা এটা হল – ঈমানের সর্বাধিক মজবুত হাতল।

৪৬. সৎব্যক্তিদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করবে। অসৎ সঙ্গ পরিত্যাগ করবে।

৪৭. কোন মুসলিমকে বিপদগ্রস্থ অবস্থায় দেখলে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাবে এবং তাদেরকে আনন্দিত রাখার চেষ্টা করবে।

৪৮. নম্রতা, ধীর স্থিরতা এবং ধৈর্যাবলম্বন করবে। তাড়াহুড়া পরিত্যাগ করবে।

৪৯. অন্যের কথার মাঝে বাধা সৃষ্টি করবে না। সুন্দরভাবে তা শোনার চেষ্টা করবে।

৫০. জানা-অজানা সকল মুসলিম ভাইকে সালাম দিবে।

৫১. সুন্নতি সালাম দিবে। বলবে: আসসালামু ওয়া
 আলাইকুম। হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করাকেই যথেষ্ট মনে করবে না।

৫২. কাউকে গালিগালাজ করবে না। খারাপ ভাবে কারো বর্ণনা দিবে না।

৫৩. কাউকে অভিশাপ দেবে না। এমনকি তা যদি চতুষ্পদ জন্তু বা কোন জড় বস্তুও হয়।

৫৪. কোন মানুষের ইজ্জতে কোন প্রকার অপবাদ দিবে না বা তার কুৎসা রটনা করবে না। কেননা এরূপ করা কবিরা গুনাহ।

৫৫. চুগলখোরি করবে না। অর্থাৎ ফ্যাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনকে বলবে না।

৫৬. গীবত করবে না। (গীবত হল তোমার মুসলিম ভায়ের দোষের কথা তার অসাক্ষাতে কারো কাছে বলা)।

৫৭. কোন মুসলিমকে ভয় দেখাবে না এবং তাকে কোন প্রকার কষ্ট দিবে না।

৫৮. মানুষের মাঝে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। কেননা এটা হল একটি উত্তম আমল।

৫৯. জবানের হেফাজত করবে। ভাল কথা বা কাজের কথা বলবে, অন্যথা চুপ থাকবে।

৬০. সত্যবাদী হও মিথ্যা পরিত্যাগ কর। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের রাস্তা দেখায় আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়।

৬১. দুমুখো হয়ো না। একই বিষয়ে এদের কাছে এক কথা অন্যদের কাছে আর এক কথা বলবে না।

৬২. আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করবে না। আর সত্য বিষয় হলেও বেশী বেশী কসম করার অভ্যাস করবে না।

৬৩. কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না। কেননা তাকওয়ার মানদণ্ড ছাড়া কারো উপর কারো প্রাধান্য নেই।

৬৪. কোন জ্যোতির্বিদ, গণক বা যাদুকরের কাছে যাবে না। তাদের কোন কথা বিশ্বাস করবে না। এতে ঈমানের ক্ষতি হয়।

৬৫. কোন মানুষ বা প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করবে না। কেননা কিয়ামত দিবসে চিত্রকরদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।

৬৬. তোমার বাড়িতে কোন প্রাণীর ছবি রাখবে না। কেননা তাতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।

৬৭. কেউ হাঁচি দেয়ার পর আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামু কাল্লাহ বলবে।

৬৮. কোন ক্রমেই তাবিজ-কবচ, তাগা ইত্যাদি ব্যবহার করবে না। কেননা এগুলো ব্যবহার করা শিরক।

৬৯. প্রতিটি পাপকাজের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করবে। খারাপ কাজ হয়ে গেলেই ভাল কাজ করবে, যাতে উক্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। এরূপ বলবে না অচিরেই তওবা করব।

৭০. আল্লাহ্‌ তায়ালার ক্ষমা ও করুণার আশাবাদী হও। আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখ।

৭১. আল্লাহ্‌র শাস্তির ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত থাক। তার শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না।

৭২. বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারী হও। এবং সুখের কালে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।

৭৩. অধিকহারে সৎকাজ করবে। যাতে করে মৃত্যুর পরেও তার ছওয়াব জারি থাকে। যেমন মসজিদ তৈরি করা, ইসলামী জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার করা।

৭৪. আল্লাহর কাছে জান্নাত পাওয়ার প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করবে।

৭৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করবে।

ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যেনা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলিহি ওয়াছাহবিহি ওয়া সাল্লাম।

কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর পরিবার ও সকল সাহাবীদের প্রতি অবিরাম ধারায় রহমত ও শান্তি নাযিল করুন। আমীন।

  75 وصية للشباب
ترجمة: محمد عبد الله الكافي ، الداعية بمكتب دعوة الجاليات بالجبيل

অনুবাদ: মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল

দাঈ, জুবাইল দা’ওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।


No comments:

Post a Comment