অতিরিক্ত গরমে করণীয় ও বর্জনীয় অর্থাৎ গরমে সুস্থ থাকার ১৪ উপায় ।





 বহাওয়াটা সুবিধার নয়। এই ভ্যাপসা গরমের দিনে যে কোনো মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। তাই এ সময় কেউ যদি নিজের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলেই সম্ভব অসুস্থতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া।


অতিরিক্ত গরমে করণীয়-

ঘরে যথাসম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন। অপ্রয়োজনীয় কারণে দিনে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা বাইরে বের না হওয়া ভালো। বের হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নিবেন। গরমে কালো রঙের ছাতা পরিহার করুন। সারা দিনে প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সাথে নিন। দিনে কমপক্ষে ৩লিটার পানি পান করুন। আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের কাপড় নির্বাচন করুন। খুব গরমে কালো রঙ পরিহার করুন। প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল ও ফলের জুস খান। গরমের সময় টক ফল খুবই ভালো। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ, গরমের সময় তারা অতিরিক্ত টক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ সালাদ বা সবজি রাখুন। এতে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি হবে না এবং শরীর ঠাণ্ডা থাকবে।


অতিরিক্ত গরমে বর্জনীয়-
অতিরিক্ত গরমে সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড্রিঙ্কস শরীরের পানিকে নিরূদিত করে যা শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরী করে। এছাড়াও ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় এবং গলা শুখিয়ে আসে। তাই গরমে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে অবশ্যই ড্রিঙ্কস না। গরমের কারণে যেকোনো জায়গা থেকে পানি পানে বিরত থাকুন। দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এজন্য পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাইরে পানি পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনারেল ওয়াটার গ্রহণ করুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবারকে না বলুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। গরমে তেলে ভাজা বা রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরমে এ জাতীয় খাবার যত বেশী খাবেন, তত বেশী গরম লাগবে। সুতরাং এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। স্ট্রিট ফুড বর্জন করুন। স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। গরমের কারণে ঘরে থাকতে চাইলেও অনেকেই আছেন শারীরিক পরিশ্রম করেন। তাদেরকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়। অনেকেই আছেন দিন আনেন দিন খান। সেক্ষেত্রে যেন শরীরে পানি বা লবণের স্বল্পতা না হয় এই জন্য স্যালাইন খেতে পারেন। বাইরে চলাচলের সময় কাছে স্যালাইন রাখতে পারেন। যদি শরীর দুর্বল মনে হয়, সেক্ষেত্রে সাথে সাথে স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন। এতে দুর্বলতা কমবে। প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। শুধু স্যালাইন গুড়া খেলে বা কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

এই গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। বাইরে চলাফেলার সময় বয়স্ক এবং শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। কেউ অসুস্থ হলে সচেতনতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।


অতিরিক্ত গরমের কারণ

সম্প্রতি তাপমাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি ছাড়াও অধিক পরিমাণে গরম অনুভূত হচ্ছে। এর পিছনে বিশেষ কারণ হচ্ছে বছরের ঠিক দুই সময় পৃথিবী বিষুব রেখায় সূর্য বরাবর অবস্থান করে। এতে সূর্যরশ্মি সরাসরি পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পড়ে। ফলে বেশী গরম অনুভূত হয়। বছরের এই দুই সময় হচ্ছে মে মাসের ২২-২৮ এবং সেপ্টেম্বর ২২-২৮ থেকে। এই সময় দিন রাত সমান থাকে। বর্তমানে “মে-ইকুইনক্স” চলছে। এজন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী মাত্রায় গরম অনুভূত হচ্ছে।

গরম আবহাওয়া সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাদের জন্য

  • ৬০ বছরেরও বেশি বয়স্ক মানুষ
  • ১০ বছরের নিচে শিশু
  • দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন মানুষ, উদাহরণস্বরূপ হার্ট বা শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস রোগী
  • যারা সরাসরি সূর্যের নিচে বা গরম এবং কম বাতাসযুক্ত এলাকায় কাজ করেন


  •                                                                                                                                                                                                                                                                                                              এই গরমে সরাসরি সূর্যের নিচে কাজ করা ঝুকিপূর্ণ


তাপ সংক্রান্ত অসুস্থতা

গরমের ফুসকুড়ি

এটি গরমে আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যধিক ঘামের কারণে হয়ে থাকে এবং বিশেষ করে ছোট শিশুদের মাঝে বেশী দেখা যায়। সাধারণত যারা ঘনবসতিপূর্ণ এবং স্যাতস্যাতে এলাকায় বসবাস করেন, গরমে তাদের উচিত ঘরে বাতাস চলালের ব্যবস্থা করা।

ডিহাইড্রেশন

শরীরে পানির পরিমাণ অন্যান্য তরল পদার্থ থেকে কমে গেলে ডিহাইড্রেশন হয়। গরমে প্রায় সকলেরই কম বেশী ডিহাইড্রেশন হয়।ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর ভারসম্য বজায় রাখতে পারেনা  এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে যে কেউ দুর্বল বোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

হিট ক্র্যাম্পস

শরীর থেকে অধিক পরিমাণে পানির সাথে লবণ বের হয়ে যাওয়ার কারণে হাত ও পায়ের পেশী ক্র্যাম্প করে। হিট ক্র্যাম্প হচ্ছে হিট এক্সশনের প্রথম ধাপ। হিট এক্সশন হচ্ছে অতিরিক্ত গরমে থেকে সৃষ্ট আরেক ধরনের অসুস্থতা। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে হিট এক্সসশনের কারণে অনেক সময় হঠাৎ করে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়।

হিট স্ট্রোক

যখন শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না এবং তাপমাত্রা  ৪০.৫  ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে যায়, তখন যে কেউ হিট স্ট্রোক করতে পারেন। তাপ সম্পর্কিত এটি সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থতা এবং এটি জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো

  •  ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা এর চেয়ে বেশী জ্বর
  • চামড়া লাল হয়ে যাওয়া
  • শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া

তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ রোগীকে ঠান্ডা কোন জায়গায় রেখে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে হবে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে অবশ্যই মিষ্টি বা স্যালাইন দিতে হবে। এতে দ্রুত সুগার লেভেল বেড়ে যাবে।

অতিরিক্ত গরমে করণীয়

ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন

ঘরে যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন। অপ্রয়োজনীয় কারণে দিনে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা  বাইরে বের না হওয়া ভালো। বের হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নিবেন। গরমে কালো রঙের ছাতা পরিহার করুন।

গরমে বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা নিবেন

প্রচুর পানি পান করুন

সারা দিনে প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সাথে নিন। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করুন।

পানি পান করুন

আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন

গরমে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের কাপড় নির্বাচন করুন। খুব গরমে কালো রঙ পরিহার করুন।

মৌসুমী ফল গ্রহণ করুন

প্রচুর পরিমানে ফল ও ফলের জুস খান। গরমের সময় টক ফল খুবই ভালো। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ, গরমের সময় তারা অতিরিক্ত টক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।


     সবুজ সালাদ বা সবজি খান                                                      খাবারের তালিকায় রাখুন সবুজ সবজি ও সালাদ                             প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ সালাদ বা সবজি রাখুন। এতে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি হবে না এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।      

অতিরিক্ত গরমে বর্জনীয়

সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

অতিরিক্ত গরমে সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড্রিঙ্কস শরীরের পানিকে নিরূদিত করে যা শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরী করে। এছাড়াও ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় এবং গলা শুখিয়ে আসে। তাই গরমে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে অবশ্যই ড্রিঙ্কস না।













গরমে যেকোনো ড্রিঙ্কস কে না বলুন

পানি পানের সময় সতর্ক  থাকুন

গরমের কারণে যেকোনো যায়গা থেকে পানি পান থেকে বিরত থাকুন। দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এজন্য পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাইরে পানি পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনারেল ওয়াটার গ্রহণ করুন।



বিশুদ্ধ পানি পান করুন

ফাস্টফুডকে না বলুন

ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি  জাতীয় খাবারকে না বলুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। গরমে তেলে ভাজা বা রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরমে এ জাতীয় খাবার যত বেশী খাবেন, তত বেশী গরম লাগবে। সুতরাং এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। স্ট্রীট ফুড বর্জন করুন অতিরিক্ত গরমে।



গরমে ফাস্টফুডকে না বলুন

স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন

গরমের কারণে ঘরে থাকতে চাইলেও অনেকেই আছেন শারীরিক পরিশ্রম করেন। তাদেরকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়। অনেকেই আছেন দিন আনেন দিন খান। সেক্ষেত্রে যেন শরীরে পানি বা লবণের স্বল্পতা না হয় এই জন্য স্যালাইন খেতে পারেন। বাইরে চলাচলের সময় কাছে স্যালাইন রাখতে পারেন। যদি শরীর দুর্বল মনে হয়, সেক্ষেত্রে সাথে সাথে স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন। এতে দুর্বলতা কমবে।

প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। শুধু স্যালাইন গুড়া খেলে বা কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

গরমে সুস্থ থাকার ১৪ উপায়

এ গরমে কী করতে পারেন, সে পরামর্শগুলো দেখে নিতে পারেন।
১. সরাসরি রোদে যাওয়া থেকে বা অধিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সরাসরি রোদে যাবেন না। এই সময়টা দিনের সবচেয়ে বেশি গরম থাকে।
২. সূর্যের আলো থেকে চোখ সুরক্ষার জন্য রোদচশমা ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সূর্যের আলোয় সরাসরি যাওয়ার পরিবর্তে মাথায় ছাতা, টুপি, পায়ে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
৩. তৃষ্ণা না পেলেও প্রচুর পানি পান করুন। পানি ছাড়াও ডাব, জুস, লাচ্ছি, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে।
৪. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের পরিবর্তে অল্প অল্প খান। 

৫. কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে পানি অবশ্যই নেবেন।
৬. সুযোগ থাকলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে, ঘুমানোর আগে গোসল করে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
৭. হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরবেন।
৮. ঘর যাতে ঠান্ডা থাকে এবং ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সে সুযোগ রাখবেন।
৯. কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১০. গরমের দিনে খাবার সামান্য এদিক-ওদিক হলেই পেটব্যথা হয়, পেট কামড়ায়, হজমে গোলমাল দেখা দেয়। বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সচেতন থাকুন।
১১. গরমে আর ক্লান্তিতে বাইরের খোলা খাবার ও পানীয় গ্রহণের হার বেড়ে যায়। তার ওপর গরমে সহজেই খাদ্যদ্রব্য দূষিত হয়। বাড়ে মাছি ও পোকামাকড়ের বিস্তার, যা রোগবালাই ছড়াতে সাহায্য করে। এসবের ফলে বাড়ে পানি ও খাবারবাহিত রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো জন্ডিস। জন্ডিস থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে রাস্তার খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
১২. গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরমে ঘামাচির সমস্যা বাড়ে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত গরমে প্রচুর পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত একবার গোসলের সময় সাবান মাখতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
১৩. গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। হিটস্ট্রোক এড়াতে যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয়, যেমন: খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয়, যেমন: চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
১৪. গরমে প্রচুর সবজি খেতে পারেন। শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লাউ, শাক-পাতা আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।


গরমে হওয়া কিছু রোগ ও তার প্রতিকার

গরমের শুরুতে নতুন কিছু অসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এসব অসুখের কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আগে-ভাগে জানা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। একেকটি ঋতু পরিবর্তনে আবহাওয়ার বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন অণু-জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ও মানবদেহে রোগ সৃষ্টিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন হয়। এই সার্বিক পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকমের রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।
গরমের রোগ সমূহঃ

গরমে বা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মানুষ প্রধানত দুইভাবে আক্রান্ত হয়
অতি তাপমাত্রাজনিত সমস্যা ও জীবাণু সংক্রমণজনিত রোগ।

অতি তাপজনিত সমস্যা
চার বছরের কমবয়সী শিশু, ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, বেশি মোটা এবং বিভিন্ন রোগগ্রন্থ ব্যক্তিরা অতি তাপজনিত সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম অধিক ঘামজনিত জল স্বল্পতা, রক্তে লবণের মাত্রা কমে যাওয়া, অতি দুর্বলতা, হাত-পা কামড়ানো, মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো ও বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। এছাড়া অতি তাপে হিট স্ট্রোক বা খিঁচুনি থেকে অজ্ঞান হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন চর্মরোগ, যেমন ঘামাচি, চামড়ায় ফোস্কা পড়া, লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানির মতো সমস্যাও হতে পারে।

গরমের বিশেষ রোগ সমূহ
সর্দি, কাশি, ভাইরাল জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, হাম, বসন্ত, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস, মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস ইত্যাদি। এর মধ্যে সর্দি, কাশি এবং ভাইরাসজনিত জ্বরের হার সবচেয়ে বেশি। কারো কারো শ্বাসকষ্ট বা সর্দির সমস্যা থাকলে সেটা বেড়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সাধারণ আমাশা এবং রক্ত আমাশা বেড়ে যেতে পারে। দূষিত জল ও খাদ্য থেকে কলেরার মাত্রা অনেক বেশি হতে পারে।

উত্তাপজনিত সমস্যা


প্রতিরোধে করণীয়
* পর্যাপ্ত এবং প্রয়োজনে প্রচুর জীবাণুমুক্ত জল পান করুন।
* চিনিযুক্ত জল, কোমল পানীয় ও অতি ঠাণ্ডা জল বর্জন করুন। কারণ এক্ষেত্রে ঘাম বেড়ে গিয়ে জলস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
* অতি গরমে ছায়াযুক্ত স্থান অথবা ঘরের মধ্যে অবস্থান করুন।
* বেশি ঘেমে গেলে জল দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন অথবা গোসল করে ফ্যান ছেড়ে শরীর শুকিয়ে ফেলুন।
* হালকা ও সুতি জামা পরিধান করুন।
* রোদের মধ্যে পরিশ্রম না করে সকালে বা বিকালে স্বল্প সময়ে কাজ সেরে ফেলুন।
* বেশি ঘাম হলে লবণযুক্ত শরবত পান করুন। এক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।
গরমের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে করণীয়
* ফুটানো এবং বিশুদ্ধ জল পান করুন।
* ফুটপাতের খোলা জায়গার খাবার খাবেন না।
* ধুলাবালিতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
* সর্দি বা কাশির শুরুতেই ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিত্‍সা গ্রহণ করুন।
* বসন্ত আক্রান্ত রোগীদের থেকে দূরে থাকুন।
* জ্বর হলে পর্যাপ্ত জল বা স্যালাইন জল গ্রহণ করুন। জ্বরের মাত্রা যদি বেশি হয় বা বমিসহ পেট ব্যথা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
* ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত স্যালাইন জল পান করুন এবং তিন দিনে জ্বর না কমলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।


এই গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। বাইরে চলাফেলার সময় বয়স্ক এবং শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। কেউ অসুস্থ হলে সচেতনতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

তথ্যসূত্র

১। healthdirect.gov.au/hot-weather-risks-and-staying-cool

২। scientificamerican.com/article/heat-wave-health/

৩। blog.thebathroomsink.com/2017/01/11/yes-to-sunscreen/

৪। scientificamerican.com/article/heat-wave-health/

৫। familydoctor.org/condition/heat-exhaustion-heatstroke/

  ৬। জিনিউজ, বারডেম 

No comments:

Post a Comment