অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল সৃষ্টির আগে ও পরে অভিশপ্ত ইহুদিবাদীদের ইতিহাস ।


পাশ্চাত্য আজকাল সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে দাবি করছে। অথচ ইহুদিবাদী ইসরাইল সন্ত্রাসবাদের জোরে ও জবর দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলকে সন্ত্রাসী এবং বর্ণবাদী হিসেবে অভিহিত না করে পাশ্চাত্য ও ইহুদিবাদী মহল দখলদারদের হাত থেকে মাতৃভূমিকে উদ্ধারের জন্য সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিদেরকেই সন্ত্রাসী বলে অপবাদ দিচ্ছে। পাশ্চাত্য ও তাদের প্রচার মাধ্যম গোয়েবলসীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে সন্ত্রাসী এবং দখলদার ইসরাইলকে মজলুম বলে তুলে ধরছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে সন্ত্রাসবাদ বলে প্রচার করছে। অথচ বাস্তবতা ও বাস্তব ইতিহাস সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রই তুলে ধরে। ইসরাইল সৃষ্টির আগ থেকেই ইহুদিবাদী নানা গ্রুপ সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালিয়ে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির পটভূমি তৈরি করেছিল।

গত ১৫ মে ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। এ দিনটি ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের কাছে ‘নাকবা দিবস’ হিসেবে পরিচিত। ‘নাকবা’ অর্থ হলো বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালের এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা পরিবর্তন। কোনো কোনো পরিবর্তনে মানুষ নতুনকরে আশাবাদী হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। ভেবেছিলেন বিশ্বজুড়ে অন্যায় ও অবিচারের মাত্রা কমে আসবে। মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যের অধিকারকেও সম্মান করবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শ্লোগানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও এ আশা জোরদার হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি। আধিপত্যকামীদের ক্ষমতা ও অর্থের লোভ সবকিছুতেই হতাশার ছোয়া লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যায় ও জুলুমের পদ্ধতিতে হয়তো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তা পুরোদমেই অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইসরাইলের দখলদারি এবং হত্যা-নির্যাতনে কোন পরিবর্তন আসেনি।

নিঃসন্দেহে গত দুইশ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো- ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল। ফরাসি গবেষক রুযে গারুদি বলেছেন, “রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই ইহুদিবাদের উৎপত্তি। ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ লক্ষ্য হাসিল করতে ইহুদি ধর্মকে অপব্যবহার করছে।” ইহুদিবাদীরা গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চরম দুঃখ-দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে চালানো হচ্ছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ফিলিস্তিন দখল করে সেখানে এমন একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই সংকটের গভীরে নিক্ষেপ করেছে।

অবৈধ ইসরাইলের কারণে গত ৭৩ বছর ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই অশান্তি ও অনিরাপত্তার আগুনে জ্বলছে। এর জন্য সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলোর ক্ষমতালিপ্সাই প্রধান কারণ। ইসলামী জগতের একেবারে কেন্দ্রে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে সুদূরপ্রসারী অশুভ লক্ষ্য কাজ করেছে, তা বোঝা যায় ইতিহাস ঘাটলেই। ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্যের বলয় বাড়ানো নিয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা নানা অপকৌশল অবলম্বন করছিল। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপরও তাদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। কারণ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই ফিলিস্তিন। ভৌগোলিক দিক থেকে এটি একটি কৌশলগত অঞ্চল। সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফিলিস্তিনকে নিজের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালায় ফ্রান্স।

ফ্রান্সের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি টের পেয়ে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় ব্রিটেন। এ পরিকল্পনার আওতায় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এরই আওতায় দখল হয়ে যায় কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ফিলিস্তিন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন ক্ষয়িষ্ণু তখন পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব চলছিল। এ অবস্থায় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনন্মুখ পরিস্থিতি ইউরোপকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দু’টি জিনিস প্রয়োজন ছিল। এক- মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের একাংশ নিয়ে গঠিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। দুই- টুকরো টুকরো ভূখণ্ডে পাশ্চাত্যের স্বার্থ সংরক্ষণকারী পুতুল সরকার বসানো।

ওসমানীয় সামাজ্যের পতন ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাব ক্ষুণ্ন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮৯৭ সালে থিয়োডর হার্জেল ও তার সহযোগীরা সুইজারল্যান্ডে এক সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। হার্জেল পরবর্তীতে ইহুদিবাদের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিশ্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তার বড় লক্ষ্য। কোথায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে ইস্যু সামনে আসলে বিভিন্ন এলাকার নাম উত্থাপিত হয়। হার্জেল ফিলিস্তিনেই ইহুদিদের জন্য প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের পক্ষে ছিলেন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য হার্জেলের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি না হওয়ায় হার্জেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে নয়া শক্তির সমীকরণের এক পর্যায়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এরপর বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে। ইহুদিবাদের প্রতি ব্রিটিশ সামাজ্যবাদের সমর্থন ফিলিস্তিনে প্রথম ইহুদিবাদী সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে।

১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ও বিশ্ব ইহুদিবাদের মধ্যে সম্পর্কের নয়া অধ্যায় শুরু হয়। ওই বছর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। ১৯১৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটেনের একাধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। তিন দশক ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ছিল ফিলিস্তিন। তখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল এটি। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা ফিলিস্তিনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই তিন দশকে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা ফিলিস্তিনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিলিস্তিনের দিকে ইহুদিদের ঢল নামে। নানা দেশ থেকে তাদেরকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে ইহুদিবাদীদের জন্য স্থায়ী আবাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়।

এ সময় ব্রিটিশ সরকারের মদদে ইহুদিবাদীরা গোপনে ‘হাগানা’ নামের সন্ত্রাসী সেনাদল গঠন করে। তারা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যার মিশনে নামে। একের পর এক বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা ইহুদিবাদীদেরকে ব্যাপক অর্থ সাহায্য দেয়। এ অর্থে তারা ফিলিস্তিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা ও বিভিন্ন ইহুদিবাদী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে,যাতে সুযোগ এলেই ইহুদিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনকে ভাগ করার ইশতেহার প্রকাশ করে। এরই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এক অংশ দেয়া হয় ইহুদিবাদীদেরকে। সেখানে তারা ইহুদি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। অন্য অংশ দেয়া হয় ফিলিস্তিনিদেরকে।

একপেশে ওই ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের অর্ধেককে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বের মোড়লদের ইহুদিবাদপ্রীতির কারণে আজও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও মোতায়েন রয়েছে ইহুদিবাদী বাহিনী। জাতিসংঘের একপেশে ইশতেহারের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ৩৩টি দেশ। এর মধ্যে ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। ১৩টি দেশ ইশতেহারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোটদানে বিরত ছিল আরও দশটি দেশ। ইশতেহার প্রকাশের এক বছর পর ফিলিস্তিন অংশটিও ইহুদিবাদীরা দখল করে নেয়। এর ফলে সেখানে নেমে আসে হাহাকার। শরণার্থীতে পরিণত করা হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। তার হয়ে পড়েন সহায়-সম্বলহীন।

ফিলিস্তিনি মুসলমানদের এ দুর্দশার মাঝে ইসলামি ও আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিবাদ ছিল শতাব্দির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। এই সুযোগে অবশেষে ১৯৪৮ মাসের মে মাসে ফিলিস্তিন থেকে ব্রিটিশ বাহিনী চলে যায়। শুরু হয় ইহুদিবাদীদের দুঃশাসন।

১৯৫০’র দশকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আর ফিলিস্তিনের কথা মনেই করতে পারবে না।” ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইহুদিদের ভূখণ্ড বলেও তিনি জোর গলায় দাবি করেছিলেন।

তবে ফিলিস্তিনিদের সাহসিকতা ও প্রতিরোধ প্রমাণ করে গোল্ডা মায়ারের মতো ইহুদিবাদীদের স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। কারণ ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মও মাতৃভূমি উদ্ধারে সোচ্চার রয়েছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল সৃষ্টির পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও অনিরাপত্তা জেকে বসেছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অন্তত ১০টি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এসব যুদ্ধের মধ্যে ১৯৬৭, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ফিলিস্তিন জবরদখলের দুই দশক পর ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদীরা আরব বিশ্বের ওপর ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এ সময় ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাস, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিশরের সিনাই মরুভূমি দখল করে নেয়। আরব ভূখণ্ড দখলের পর এসব এলাকায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। জমি দখলের পাশাপাশি  ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট বসতিগুলোকে একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হয়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের শহর ও গ্রামগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকার মাঝখানে ইহুদি উপশহর নির্মাণ করা হয়েছে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে নিয়ে আসার প্রবণতা আরো বেড়ে যায় এবং ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে ইহুদি অভিবাসীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে সব হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয় অগণিত ফিলিস্তিনি।

ইসরাইলের এ ধরনের অমানবিক তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ দুটি ইশতেহার প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের ইশতেহারে ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে সরে আসতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ওই দুই ইশতেহারকে কোন গুরুত্বই দেয়নি।  এখনও তারা পুরোদমে ইহুদি বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।  এছাড়া ২০০২ সালে ইসরাইল ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করেছে। এ দেয়ালের উচ্চতা ছয় মিটার। এটি বর্ণবাদী দেয়াল নামেও পরিচিত। এই দেয়ালের মাধ্যমেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের আরো একটা অংশ নতুনকরে দখলে নিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কোনো প্রতিবাদকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসরাইল। গাজার ওপর ইহুদিবাদীদের সর্বাত্মক অবরোধও এখনও অব্যাহত রয়েছে।




পৃথিবীর সব মুফাসসিরিন এবং মুহাদ্দিস একমত যে, ইহুদিরা অভিশপ্ত এবং খ্রিষ্টানরা পথভ্রষ্ট জাতি। একসময় ইহুদি জাতি সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের সম্পর্কে অনেক স্থানে আলোচনা আছে। তাদের প্রতি মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে অসংখ্য নিয়ামত নাজিল করেছিলেন। কিন্তু তারা সেসব নিয়ামত ভোগ করেও মহান আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করেছে। তাদের সঠিক পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তায়ালা অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। কিন্তু তারা সেসব নবী-রাসূলের সাথে অমানবিক আচরণ করেছে। মহান আল্লাহ তাদেরকে দু’টি আসমানি কিতাব যবুর ও তাওরাত দিয়ে ধন্য করেছিলেন। কিন্তু তারা এত হতভাগ্য যে, ঐ কিতাবের কোনো নির্দেশ তারা মান্য করেনি। হযরত মূসা (আ.), হযরত দাউদ (আ.) ও হযরত সোলায়মান (আ.)-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত নবী তাদের মধ্যে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেন। কিন্তু হতভাগ্য ইহুদি জাতি তাদের স্বভাব পরিবর্তন করেনি।

এই ইহুদিরা তাদের প্রত্যেক নবীকেই অমানবিক কষ্ট দিয়েছে। কাউকে তারা হত্যা করেছে। কাউকে শূলে চড়িয়েছে। হযরত মূসা (আ.)-এর ওপর তারা সীমাহীন নির্যাতন করেছে। হযরত ঈসা (আ.)কে তারা হত্যা করার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু আল্লাহর দয়ায় তিনি বেঁচে যান, তাঁকে তারা হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। এই ইহুদিরা তাদের সমসাময়িক নবীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কেও তারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতায় পরিপূর্ণ ইহুদি জাতির ইতিহাস। তদানীন্তন যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত সারা বিশ্বে যেখানেই যত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, সেসব ঘটনার পেছনে ইহুদিদের কালো হাত সক্রিয় ছিল। এই ইহুদিদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।


ইহুদিরা কেবল নিজেরাই আল্লাহর পথ থেকে বিরত হয়েই

 ক্ষান্ত হয়নি, বরং সেই সাথে তারা এতবেশি দুঃসাহসী

 অপরাধপ্রবণ হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর মানুষকে পথভ্রষ্ট করার

 জন্য যত আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে, সেসব আন্দোলনের পেছনে

 কালো হাত ও অর্থ রয়েছে। বর্তমানেও তারা ইসলাম ও

 মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। তারা অর্থ

 দিয়ে, শক্তি দিয়ে নানা ক‚টকৌশলে ইসলামী আন্দোলন

 দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।


ইহুদিদের অত্যাধুনিক অপরাধ ও অপকর্ম হলো অধুনা বিপর্যয়কারী পুঁজিবাদ, সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম আল্লাহর সুস্পষ্ট অস্বীকৃতি, আল্লাহর সাথে প্রকাশ্যে দুশমনি ও আল্লাহভিত্তিক মতাদর্শ নির্মূল করার প্রকাশ্য সংকল্পের ভিত্তিতে জীবনবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়েছে ও চীনসহ অন্যান্য রাষ্ট্র টিকে আছে এই সমাজতন্ত্রের উদ্ভাবক, আবিষ্কারক ও প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে হযরত মূসা (আ.)-এর উম্মতের এক ব্যক্তি তথা ইহুদি। সমাজতন্ত্রের আধুনিক বিশ্বে পথভ্রষ্টতার সবচেয়ে বড় স্তম্ভ হলো ফ্রয়েডীয় দর্শন। আর মজার ব্যাপার এই ফ্রয়েড নামক ব্যক্তিও ইহুদি। কার্লমাস্ক, লেলিন, স্টালিন, ব্রেজনেভও ছিল ইহুদি।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনের ওপরে যে হামলা পরিচালিত করে তার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের ওপরে। এ ঘটনাকে উপলক্ষ করে পৃথিবীতে ইসলামী আন্দোলনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে, আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা করে একটি প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র উৎখাত করলো। সভ্যজগতের সমস্ত নিয়মনীতি পদদলিত করে পবিত্র রমজান মাসে এবং ঈদের দিনেও অসংখ্য মুসলমান হত্যা করলো। তাদের প্রচার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার চালালো।

এই ঘৃণ্য ঘটনা ইহুদিরাই ঘটিয়েছিল। কারণ সেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে একজন ইহুদিও তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেনি। অথচ প্রায় চার হাজার ইহুদি সেখানে চাকরি করতো।

অভিশপ্ত ইহুদিদের দ্বারা এ ঘটনা সংঘটিত হবার অসংখ্য প্রমাণ থাকার পরও ইহুদিদের প্রতিপালক ইসলামবিদ্বেষী আমেরিকা সমস্ত দোষ ইসলামপন্থীদের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালালো এবং স্বাধীনতাকামী মুসলিম সংগঠন, সেবামূলক মুসলিম সংগঠনসহ ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামী দলগুলোকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করলো।

এদের অর্থলোভ এত প্রবল যে, ঘৃণ্য সুদ বৈধ করার জন্য তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তন করে হারাম সুদকে হালাল বানিয়েছে। সুদ ব্যবসায় তাদের কলঙ্ক বিশ্বজোড়া।

সুতরাং ইহুদিরা হলো অভিশপ্ত, আল্লাহ এদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন। যারা এই অভিশপ্ত ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক রাখবে, এদের সাথে যোগসাজশ করে মুসলমানদের ক্ষতি করবে, ইসলামী আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, তারাও ইহুদিদের সাথেই জাহান্নামে যাবে। ইহুদিদের পথ হলো চির অভিশপ্তদের পথ।

খ্রিষ্টান জাতি পথভ্রষ্ট: খ্রিষ্টানদের পথভ্রষ্টতার কারণ হলো তারা আল্লাহর বিধানের সাথে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করেছে। এরা আল্লাহর নাজিল করা কিতাবের মধ্যে ইহুদিদের মতো বিকৃত করেছে। এরা ঈসা (আ.)কে আল্লাহর পুত্রের আসনে বসিয়েছে। আল কুরআনে সূরা তাওবার ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “ইহুদিরা বলে যে, উজাইর আল্লাহর পুত্র। আর ঈসায়ীরা বলে যে, মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ এদের অপরাধ এ পর্যন্ত পৌঁছেই থেমে থাকেনি, এরা নিজেরাও নিজেদের স্বয়ং আল্লাহর সন্তান বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বানিয়েছে। এরা বিশ্বাস করে যে, আমাদের নবী যেহেতু আল্লাহর সন্তান, আর আমরা হলাম নবীর অনুসারী। সুতরাং সেই সুবাদে আমরাও আত্মীয়-পরিজন। এদের ভিত্তিহীন ধারণা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘ইহুদিরা ও খ্রিষ্টানরা বলে যে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়পাত্র।’ (সূরা মায়েদা : ১৮)।

এই অপরাধীরা যে নবীকে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে তার অনুসরণ করার দাবি করে থাকে, সেই নবী হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, তিনি ছিলেন আমার বান্দা এবং আমার বান্দা হবার ব্যাপারে তাঁর মধ্যে সামান্যতম দ্বিধা, সংকোচ, লজ্জা ও কোনো কুণ্ঠাবোধ ছিল না। তিনি স্বয়ং বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী নির্বাচিত করেছেন, বরকতসম্পন্ন করেছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন। আর নামায ও জাকাত আদায়ের নির্দেশ দান করেছেন, যতদিন আমি জীবিত থাকবো। আর নিজের মায়ের হক আদায় করেছেন এবং আমাকে অহঙ্কারী ও হতভাগ্য করেননি। আমার প্রতি শান্তি, যখন আমি জন্ম নিয়েছি এবং যখন আমার মৃত্যু হবে এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে।’ (সূরা মারইয়াম : ৩০-৩৩)।

এই সূরার পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, এ হচ্ছে মারইয়ামের পুত্র ঈসা এবং এ হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে প্রকৃত সত্য কথা। একশ্রেণির মানুষ তাঁর প্রতি যে অমূলক ধারণা পোষণ করে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটা আল্লাহর কাজ নয় যে, তিনি কাউকে নিজের সন্তান বানিয়ে নেবেন। তিনি এসব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। যারা হযরত ঈসার আদর্শ ত্যাগ করে তাঁর সম্পর্কে মনগড়া ধারণা সৃষ্টি করেছে, তিনি স্বয়ং তাদের প্রতি এভাবে আহবান জানিয়েছেন, ‘আল্লাহ আমারও রব এবং তোমাদেরও রব। সুতরাং তোমরা তাঁর দাসত্ব করো আর এটাই হলো সিরাতুল মুস্তাকিম’। (সূরা মারইয়াম : ৩৬)।

হযরত ঈসা (আ.) স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি যেমন এক আল্লাহকে রব ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছি এবং একমাত্র তাঁরই দাসত্ব, বন্দেগী ও ইবাদত করছি, তোমরাও তাই করো এবং একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করছি তোমরাও তাই করো এবং এটাই সহজ-সরল পথ।’

কিন্তু দুঃখজনকভাবে খ্রিষ্টানরা সেই আদর্শ ত্যাগ করে নিজেরা নিজেদের মনগড়া বিধান তৈরি করে অনুসরণ করছে।

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে অধিকাংশ খ্রিষ্টান পাদ্রীদের মনগড়া বিধান দূরে ছুড়ে ফেলে আদর্শহীন জীবনযাপন করছে। এরা অবাধে প্রকাশ্যে ব্যভিচার করছে, বিয়ে ছাড়াই নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করে এবং সন্তান জন্ম দিচ্ছে। এসব ঘৃণ্য বিষয় তারা গর্বের সাথে প্রচার করে থাকে। এরা আল্লাহর বিধান অমান্য করে মদ পান করে, শূকরের গোশত খায়, মূর্তিপূজারি মুশরেকদের থেকে এরা নিকৃষ্ট কাজ করে। সপ্তাহে একবার গির্জায় যাবার কথা ছিল, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে সপ্তাহে সেই নির্দিষ্ট দিন রোববারেও কোনো লোক গির্জায় যায় না। সেদিন তারা গির্জায় না গিয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো দর্শনীয় স্থানে বা সী-বিচে গিয়ে পরনের সমস্ত কাপড় দূরে ছুড়ে ফেলে উলঙ্গ হয়ে বিকৃত আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে। গির্জাগুলো এখন লোকশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেক গির্জা বিক্রি করার জন্য গির্জার সামনেই বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। যে গ্রেট ব্রিটেন ইংল্যান্ডে এক শতাব্দী পূর্বে একটি মসজিদ ছিল, বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা সাত হাজারেরও ওপরে।

প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা (আ.) মানবজাতির কাছে সেই ইসলামের উপস্থাপন করেছিলেন, তাঁর পূর্বে সমস্ত নবী-রাসূল যে ইসলাম প্রচার করেছিলেন এবং তারপরে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যা করেছেন।

হযরত ঈসা (আ.)-এর তাওহীদবাদীকে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ত্রিতত্ত¡বাদে পরিণত করেছিল। যে ঈসা (আ.) পৃথিবীতে এসেছিলেন মূর্তি ধ্বংস করার জন্য, খ্রিষ্টানরা সেই ঈসার মূর্তি বানিয়ে পূজা করা শুরু করলো। সেই সাথে তাঁর মা মেরীকেও ঈশ্বরের এক-তৃতীয়াংশ রূপে সর্বত্র পূজিত হতে লাগলো। শুধু তাই নয়, সেন্টপল ও পিটারের মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করে দিলো। সারা জীবন ভরে যে যত পাপই করুক না কেন, ত্রাণকর্তা যীশুকে একবার পূজা করলেই সমস্ত পাপ ধুয়েমুছে যাবেএই বিশ্বাস খ্রিষ্টানদের মনে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হলো। রোমের পোপের হাতে খ্রিষ্টানদের যাবতীয় ধর্ম সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের দায়িত্ব দেয়া হলো।

পোপ-পাদ্রীগণ ঘোষণা করেছিলবেহেশতের দাবি একমাত্র তাদের হাতে। যে যত পাপই করুক না কেন, পোপকে উপযুক্ত মূল্যদান করলে তার আর কোনো পাপ থাকবে না। তাকে বেহেশতে যাবার পাসপোর্ট দিয়ে দেয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে সারা খ্রিষ্টানজগতে পাপ অন্যায়-অনাচারের যে প্লাবন বয়ে গিয়েছিল, তা অন্য কোনো জাতির ইতিহাসে নজির নেই। ঐ ঘৃণ্য ঘোষণার ফলে আজো সারা খ্রিষ্টজগৎ পাপ অপকর্মের অতলতলে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

কোথায় ঈসার (আ.) প্রচারিত আদর্শ আর কোথায় বর্তমান খ্রিষ্টান জাতি?

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে হযরত ঈসা (আ.) তাঁর জাতিকে যে সুসংবাদ শুনিয়েছিলেন এবং বিশ্বনবীর নাম পর্যন্ত প্রকাশ করেছিলেন, এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “স্মরণ করো, মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর পাঠানোর রাসূল, আমি সত্যতা বিধানকারী সেই তাওরাতের, যা আমার পূর্বে এসেছে আর সুসংবাদদাতা এমন একজন রাসূলের যে আমার পরে আসবে, তাঁর নাম হবে আহমদ।’ কিন্তু কার্যত সে যখন তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে উপস্থিত হলো, তখন তারা বললো, ‘এটা তো সুস্পষ্ট প্রতারণা মাত্র’।” (সূরা সফ : ৬)।


আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া হিদায়াত এই ইহুদি আর খ্রিষ্টানরা গ্রহণ

 করেনি।

 তারা আল্লাহর আইন অমান্য করে শিরক করেছে, সত্যের সীমা অতিক্রম করেছে।

 এরা নিজেরা মনগড়া বিধান রচনা করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত এসব লোকের

 ওপরেই আল্লাহ লানত করেছেন। আর আল্লাহ যার ওপর লানত করেন, তার

 কোনো সাহায্যকারী তুমি পাবে না।’ (সূরা নিসা : ৫২)।

এরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত, এদের ওপরে আল্লাহর লানত রয়েছেএরা অভিশপ্ত। সুতরাং এদের অনুসরণ করা যাবে না। মুসলমানদের মধ্যে একশ্রেণির লোক রয়েছে, তারা পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধপূজারি এবং  নির্লজ্জের মতোই তাদের অনুসরণ করে। আজকাল আধুনিক শিক্ষিত অনেকেই প্রগতির নামে উন্নতির আশায় অভিশপ্ত ইহুদি ও পথভ্রষ্ট খ্রিষ্টানদের অনুসরণ করছে। এসব পথ অনুসরণ করে মুসলমানদের কোনো উন্নতি হবে না। কেবলমাত্র আল্লাহর কুরআনের পথই মুসলমানদের উন্নতির পথ।

মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন, এসো এই জাতির অগ্রগতি আর উন্নতির কথা শোনাই।

যতদিন এই জাতির এক হাতে কুরআন আরেক হাতে তরবারি ছিল, ততদিন সারা পৃথিবী এ জাতির পদচুম্বন করেছে। আর যখন এই জাতির হাতে কুরআন ও তরবারির পরিবর্তে বাদ্যযন্ত্র উঠেছে, তখনই দুর্ভাগ্য এই জাতিকে স্বাগত জানিয়েছে।

 


No comments:

Post a Comment