সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের ফজিলত

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মাকাল বিন ইয়াসার (রা,) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম” পড়বে। এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন; যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩০৯০; আবু দাউদ, হাদিস : ২৯২২; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৯৭৯৫; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৫৯৭)













সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত নিম্নরূপ


هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [الحشر:22-24]

উচ্চারণ : হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবী ওয়াশ শাহাদাদি, হুয়ার রাহমানুর রাহিম। হুআল্লা হুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। ছুবহানাল্লাহি আম্মা য়ুশরিকুন। হুআল্লাহুল খালিকুল বা-রিউল মুছাওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউছাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্; ওয়া হুয়াল আজিজুল হাকিম।


অর্থ : ‘তিনিই আল্লাহ তাআলা, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।’ (২২) ‘তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা' আলা তা থেকে পবিত্র।’ (২৩) ‘তিনিই আল্লাহ তাআলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তারই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (সুরা হাশর, আয়াত : ২৪)




সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফযীলত কি প্রমাণিত?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,

শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব,

নিমোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রকাশ করলে উপকৃত হব-

১- কেউ যদি মাগরিবের পর সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত (হুয়াল্লাহুল্লাজী লা-ইলাহা) পড়ে তবে ফজর পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশ্তা তার জন্য মাগফেরাতের দোয়া করে এবং ফজরের পর পড়লে মাগরীব পর্যন্ত তদ্রুপ করে। এটা কি রাসূলের (স:) এর হাদীস না কি কোন বুর্জুগের বাণী?

২- কেউ যদি মাগরিবের পর ৭ বার ‘আল্লহুম্মা আজিরনী মিন্নানার’পড়ে এবং সেই রাতে মৃত্যু বরণ করে তবে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না। যদি ফজরের পর অনুরূপ পড়ে এবং সেই দিন ম্ত্যৃু বরণ করে তবে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না। এটা কি হাদীস নাকি কারো বাণী?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং এর উত্তর

এটি কোন বুজুর্গের উক্তি নয়। এটি একটি হাদীসের মর্মার্থ। হাদীসটি হল-

আরো খবর


عن معقل ابن يسار عن النبي صلى اللهعليه وسلم قال : ” من قال حين يصبح ثلاث مرات : أعوذ بالله السميعالعليم من الشيطان الرجيم . وقرأ ثلاث آيات من آخر سورة الحشر وكلالله به سبعين ألف ملك يصلون عليه حتىمسى ، وإن مات في ذلك اليوم مات شهيدا ، ومن قالها حين يمسى كانبتلك المنزلة “

হযরত মাকাল বিন ইয়াসার রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার পড়বে “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম”। তারপর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত [ হুয়াল্লাহুল্লাজী লা-ইলাহা শেষ পর্যন্ত] তিলাওয়াত করবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন। যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দ্আু করতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। [তথা মাগরিব থেকে সকাল পর্যন্তের জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা গুনাহ মাফীর জন্য দুআ করে, আর সে সময়ে মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে]।

সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩০৯০।

কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩৫৯৭।

আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-৩৭৯

সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৩৪২৫।

শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-২৫০২।

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০৩০৬।

মুসনাদুশ সাহাবাহ, হাদীস নং-২৯৭৯৫।

মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-২১৫৭।

এ হাদীসটি হাসান পর্যায়ের হাদীস।

 

২ নং এর জবাব

এটিও একটি হাদীসের অনুবাদ। এটি কোন বুজুর্গের উক্তি নয়। কোন বুজুর্গের উক্তি দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। হাদীসটি হল-

مُسْلِمِ بْنِ الْحَارِثِ التَّمِيمِىِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنَّهُ أَسَرَّ إِلَيْهِ فَقَالَ « إِذَا انْصَرَفْتَ مِنْ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ فَقُلِ اللَّهُمَّ أَجِرْنِى مِنَ النَّارِ. سَبْعَ مَرَّاتٍ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ ثُمَّ مِتَّ فِى لَيْلَتِكَ كُتِبَ لَكَ جِوَارٌ مِنْهَا وَإِذَا صَلَّيْتَ الصُّبْحَ فَقُلْ كَذَلِكَ فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ فِى يَوْمِكَ كُتِبَ لَكَ جِوَارٌ مِنْهَا »

হযরত মুসলিম বিন হারেস তামিমী রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ তাঁর দিকে মনোনিবেশ করে বলেনঃ যখন তুমি মাগরিবের নামায শেষ করবে, তখন তুমি বলবে “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার”  [হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও!] ৭ বার। নিশ্চয় যদি তুমি তা বলে থাকো, তাহলে তুমি যদি সে রাতে ইন্তেকাল কর, তবে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে। আর যদি তুমি তা সকালে পড়ে থাক, আর তুমি সেদিন মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫০৮১।

সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৯৯৩৯।

আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১০৫১।

সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৬৭।

কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩৪৬৭।

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮০৫৪।

মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-২৩৯৬।

এ হাদীসটি সহীহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালকতালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।



আরো পড়ুন–








No comments:

Post a Comment