আয়-রোজগার ভালো হওয়া সত্ত্বেও অভাব দূর হয় না। এ অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন। সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। দিনরাত পরিশ্রম করেও সুখ নেই। কোথায় যেন কী নেই নেই একটা বিষয়। আসলেই একটা জিনিস নেই। সেটা হলো- বরকত।
আল্লাহ প্রদত্ত বিষয় হচ্ছে বরক। এটা অর্জন করতে হয় বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে। মালে, সম্পদে বরকত দিলে অল্পও অনেক হয়, আর বরকত না হলে কাড়ি কাড়ি সম্পদ, রাশি রাশি ধনও হাতে ধরা দেয় না। ইসলামি স্কলারদের মতে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। এখানে জীবন-জীবিকা থেকে বরকত দূরীভূত হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো:
|আরো খবর
১)পাপাচার: গোনাহের কারণে যেমন মানুষের আজাব-গজব নাজিল হয়, তেমনি জীবিকার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বরকত (কল্যাণ ও প্রাচুর্য) উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল, সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।’ –সূরা আরাফ: ৯৬
২)প্রতারণা ও ধোঁকা: মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে এবং তাদের ধোঁকা দিলে সম্পদের বরকত চলে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন কিংবা বাতিলের)। যদি তারা সত্য বলে এবং (পণ্যের) অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং (পণ্যের) দোষ গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।’ –সহিহ বোখারি: ২০৭৯
পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে তা বিক্রি করা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল। যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়।
আরো পড়ুন : অসহনীয় অনবরত হাঁচি থেকে মুক্তি পেতে
৩)অধিক কসম খাওয়া: মানুষ নিজের কথাকে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত করে তোলার জন্য কসম খেয়ে থাকে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে অধিক কসম খাওয়া উচিত নয়। মিথ্যা কসম খাওয়া বড় ধরনের পাপ, যার কারণে সম্পদের বরকত চলে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কেননা নিশ্চয়ই তাতে (মিথ্যা কসমে) বিক্রি বেশি হয় কিন্তু পরে (বরকত) ধ্বংস করে।’ –সহিহ মুসলিম: ২৭৯৩
৪)সুদের আদান-প্রদান: সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষ সুদ গ্রহণ করে। অথচ সুদের আদান-প্রদানে জীবিকার বরকত দূর হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিঃশেষ করেন ও সদকায় প্রবৃদ্ধি দান করেন…।’ -সূরা বাকারা: ২৭৬
৫)নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় না করা: আল্লাহতায়ালা তার অশেষ নিয়ামত দ্বারা আমাদের ঘিরে রেখেছেন। রিজিক তার অন্যতম নিয়ামত। এসব নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় না করলে বরকত ও কল্যাণ লাভ করা যায় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তা হলে আমি অবশ্যই তোমাদের বেশি বেশি করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহলে (মনে রেখো) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’ –সূরা ইবরাহিম: ৭
৬)কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা: কৃপণতা মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করে, যা ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে। তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ –সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯৮
৭)প্রাপ্ত রিজিক ও তাকদিরে সন্তুষ্ট না থাকা: আল্লাহতায়ালা বান্দাদের জন্য রিজিক বণ্টন করে থাকেন। মানুষ আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে তার জীবিকায় বরকত লাভ হয়। পক্ষান্তরে ওই রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট না হলে জীবিকার বরকত চলে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ বান্দাকে প্রদত্ত জিনিসের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে যদি সে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন এবং তাকে বৃদ্ধি করে দেন। আর যদি সন্তুষ্ট না থাকে তাহলে তাতে বরকত দেন না।’ -মুসনাদে আহমাদ: ২০২৭৯
|আরো খবর
৮)অপচয় ও অপব্যয়: বাজে কাজে ও অপ্রয়োজনে খরচ অপব্যয়। এটা মানুষের নিন্দনীয় স্বভাব, যার কারণে তার মধ্যে চৌর্যবৃত্তি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, উৎকোচ গ্রহণ ইত্যাদি দুশ্চরিত্রত স্বভাব বিস্তার করে। এ জন্য ইসলাম এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ -সূরা আরাফ: ৩১
৯)জাকাত না দেওয়া: জাকাত আদায় ফরজ। জানা সত্ত্বেও অনেকে তা আদায় করে না। ফলে ইহকালীন ও পরকালীন আজাব-গজব আপতিত হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনও বৃষ্টি হতো না।’ -ইবনে মাজা: ৪০১৯
সম্পদের হক হচ্ছে জাকাত দেওয়া। এ হক প্রদান করলে সম্পদে বরকত হয়, অন্যথায় বরকত দূরীভূত হয়ে যায়।
১০)অন্যায় পথে সম্পদ অর্জন করা: হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে তার বরকত দূরীভূত হয়ে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির মতো যে আহার করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ –সহিহ মুসলিম: ১০৫২
আমাদের জীবিকায় বরকত লাভ এবং অব্যাহত থাকার জন্য উপরোক্ত কাজগুলো পরিহার করা উচিত।
রিজিকের বিভিন্ন স্তর
রিজিকের বহু অর্থ আছে। রিজিকের বহু স্তর আছে। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য কোরআন-হাদিসের আলোকে নিম্নে রিজিকের কয়েকটি স্তর তুলে ধরা হলো—
ঈমান : বান্দার সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো ঈমান। ঈমানের চেয়ে বড় রিজিক ও নিয়ামত আর কিছু হতে পারে না। যারা ঈমানের নিয়ামত অর্জন করতে পেরেছে, তারাই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যবান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ইসলাম গ্রহণ করে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে কোরো না; বরং আল্লাহই ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৭)
অর্থ-সম্পদ : অর্থ-সম্পদও রিজিকের একটি অন্যতম শাখা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদের দান করো।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩৩)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধীন দাস-দাসীদের নিজেদের জীবনোপকরণ থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে ওরা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করছে?’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ৭১)
হিকমত (প্রজ্ঞা) : হিকমত ও প্রজ্ঞা আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। এটি অর্জন করার সৌভাগ্য সবার হয় না। মহান আল্লাহ দয়া করে যাকে দেন, সে-ই তা অর্জন করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় সে নিশ্চয়ই প্রচুর কল্যাণ লাভ করে। আসলে জ্ঞানবান ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৯)
সুস্বাস্থ্য : সুস্বাস্থ্য আল্লাহপ্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ রিজিক। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁকায় পতিত—সুস্বাস্থ্য ও সুসময় বা অবসর। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭০)
আরো পড়ুন : যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন যে আপনি থাইরয়েডের শিকার !!!
নেককার স্ত্রী : আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোটা পৃথিবী মানুষের ভোগ্যবস্তু, আর পৃথিবীর ভোগ্য বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো পুণ্যবতী স্ত্রী।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩২)
সন্তান-সন্ততি : নেক সন্তান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম উপহার। পবিত্র কোরআনে নেক সন্তানকে দুনিয়ার শোভা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা...।’ (সুরা : কাহফ, হাদিস : ৪৬)
ঈমানদারদের ভালোবাসা : ঈমানদারদের ভালোবাসাও শ্রেষ্ঠ রিজিক। কারণ আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তার প্রতি ঈমানদারদের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তিনি জিবরাইলকে ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, তাই তুমিও তাকে ভালোবাসো। কাজেই জিবরাইল (আ.) তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর জিবরাইল (আ.) আসমানে এই ঘোষণা করে দেন যে আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন তাকে আসমানবাসীরা ভালোবাসে এবং পৃথিবীবাসীদের মধ্যেও তাকে গ্রহণীয় করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৮৫)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির ১০টি আমল বর্ণনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো—
১. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা
খোদাভীতি ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
২. পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করলে ইহকালেই সুফল পাওয়া যায়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫; মুসলিম, হাদিস : ৪৬৩৯)
৩. তওবা ও ইস্তিগফার করা
মুমিনের জীবনে তওবা ও ইস্তিগফারের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া রিজিক বৃদ্ধির কারণ। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৭৭)
৪. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
দানে ধন বাড়ে—এটা সর্বজনবিদিত। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য এমন—বলে দাও, ‘নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)
৫. বারবার হজ-ওমরাহ করা
একের পর এক হজ-ওমরাহ পালনে রিজিক বাড়ে। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৫)
৬. অসহায়ের প্রতি সদয় আচরণ
বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামাজিক ইবাদত। মোসআব বিন সাদ (রা.) যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের কারণে অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) তাকে বলেন, তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬)
৭. ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করে নেওয়া
আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করার মাধ্যমে অভাব দূর হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৪)
৮. আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকে প্রশস্ততা ঘটে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে জমিনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০০)
৯. বিয়ে করা
বিয়ের মাধ্যমে জীবনে বরকত ও প্রাচুর্য নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩২)
১০. অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা
আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ বান্দার হাত ফিরিয়ে দেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন