নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত,মুস্তাহাব,মাকরূহ ও নামাজ ভঙ্গের কারনসমুহ


আহকাম ও আরকান মিলিয়ে নামাজের ফরজ মোট ১৩টি। 

নামাজ শুরু হওয়ার আগে বাইরে যেসব কাজ ফরজ, সেগুলোকে নামাজের আহকাম বলা হয়।

নামাজের আহকাম ৭টি। যথাঃ

১. শরীর পাক হওয়াঃ  এ জন্য অজুর দরকার হলে অজু বা তায়াম্মুম করতে হবে, গোসলের প্রয়োজন হলে গোসল বা তায়াম্মুম করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
 
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغْسِلُوا۟ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى ٱلْمَرَافِقِ وَٱمْسَحُوا۟ بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى ٱلْكَعْبَيْنِ ۚ
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)।  (সূরা মায়েদাঃ ৬)


২. কাপড় পাক হওয়াঃ
  পরনের জামা, পায়জামা, লুঙ্গি, টুপি, শাড়ি ইত্যাদি পাক পবিত্র হওয়া।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ আর তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। (সূরা মুদ্দাসসিরঃ ৪)


৩. নামাজের জায়গা পাক হওয়াঃ  অর্থাৎ নামাজির দু
পা, দুহাঁটু,দুহাত ও সিজদার স্থান পাক হওয়া। 


৪. সতর বা শরীর ঢাকাঃ  পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের দু
হাতের কব্জি,পদদ্বয় এবং মুখমন্ডল ব্যতীত সমস্ত দেহ ঢেকে রাখা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ 
يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ 
অর্থঃ হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর।  (সূরা আরাফঃ৩১)


৫. কিবলামুখী হওয়াঃ  কিবলা মানে কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকে তোমাদের চেহারা ফিরাও।  (সূরা বাকারাঃ ১৫০)


৬. ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়াঃ  প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ সময়মতো আদায় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتْ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ كِتَٰبًا مَّوْقُوتًا নিশ্চয় সলাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।  (সূরা নিসাঃ১০৩)


৭. নামাজের নিয়্যাত করাঃ  নামাজ আদায়ের জন্য সেই ওয়াক্তের নামাজের নিয়্যাত করা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
إنما الأعمال بالنية নিশ্চই আমলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল।  (বুখারী,হাদিস-১)

নামাজ শুরু করার পর নামাজের ভেতরে যেসব কাজ ফরজ, সেগুলোকে নামাজের আরকান বলা হয়। 


নামাজের আরকান ৬টি।যথাঃ


১. তাকবিরে-তাহরিমা বলাঃ  অর্থাৎ আল্লাহর বড়ত্বসূচক শব্দ দিয়ে নামাজ আরম্ভ করা। তবে
আল্লাহু আকবর বলে  নামাজ আরম্ভ করা সুন্নাত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেনঃ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।  (সূরা মুদ্দাসসিরঃ৩)


২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াঃ  মানে কিয়াম করা। আল্লাহ বলেনঃ 
حَٰفِظُوا۟ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلْوُسْطَىٰ وَقُومُوا۟ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ
তোমরা সলাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে।  (সূরা বাকারাঃ ২৩৮)


৩. ক্বেরাত পড়াঃ
  চার রাকাতনিশিষ্ট ফরজ নামাজের প্রথম দুরাকাত এবং ওয়াজিব,সুন্নাত,নফল নামাজের সকল রাকাতে ক্বিরাত পড়া ফরজ। আল্লাহ বলেনঃ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلْقُرْءَانِ
অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়।  (সূরা মুযাম্মিল,আয়াতঃ ২০)


৪. রুকু করাঃ  প্রতিটি নামাজের প্রত্যেক রাকাতে রুকু করা ফরজ।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ
অর্থঃআর তোমরা সলাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।  (সূরা বাকারাঃ৪৩)


৫. সিজদা করাঃ  নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সিজদা করা ফরজ।আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱرْكَعُوا۟ وَٱسْجُدُوا۟ وَٱعْبُدُوا۟ رَبَّكُمْ وَٱفْعَلُوا۟ ٱلْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩
অর্থঃ হে মুমিনগণ, তোমরা রুকূ
কর, সিজদা কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে।  (সূরা হজ্জঃ৭৭)


৬. শেষ বৈঠক করাঃ  নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর তাশহুদ পড়তে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় বসা।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ثُمَّ اجْلِسْ فَاطْمَئِنَّ جَالِسًا ثُمَّ قُمْ فَإِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ فَقَدْ تَمَّتْ صَلاَتُكَ 
অর্থ,
অতঃপর ধীর স্থিরভাবে উঠে বসবে। পরে উঠে দাঁড়াবে। এইরূপ করতে পারলে তবে তোমার সালাত পূর্ণ হবে।


নামাযের ওয়াজিবসমূহ

ওয়াজিব অর্থ হলো আবাশ্যক। নামাযের মধ্যে কিছু বিষয় আছে অবশ্য করণীয়। তবে তা ফরজ নয়, আবার সুন্নাতও নয়। যা ভুলক্রমে ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়।আর ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। নিচে ওয়াজিবসমূহ উপস্থাপন করা হলো ।


 নামাযের ওয়াজিব মোট ১৪টি।যথাঃ

১. সূরা ফাতিহা পাঠ করাঃ  ফরয নামাযের প্রথম দু রাকআতে এবং সকল প্রকার নামাযের প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল সব ধরণের নামাযের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। এটাই ইমাম আবু হানিফা (রহতুল্লাহ আলাই) এর অভিমত। তবে ইমাম শাফেয়ী (রহমতুল্লাহ আলাই)এটাকে ফরয হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। তাঁর দলিল-
لاً صَلاَة لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَا تِحَةِ الْكِتاَبِ
যে নামাযে ফাতিহা পাঠ করেনি তার নামায হয়নি  (বুখারী)


২. সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানোঃ  ফরয নামাযসমূহের প্রথম দু
রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে যেকোনো সূরা বা আয়াত মিলিয়ে পড়া কমপক্ষে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পাঠ করা আবশ্যক। 


৩. তারতীব মত নামায আদায় করাঃ  তারতীব অনুযায়ী নামায অর্থাৎ নামাযে যে সকল কাজ বারবার আসে ঐ কাজগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ওয়াজিব। যেমন রুকু, ও সিজদা যা নামাযের প্রতি রাক
আতে বারবার আসে। কিরাআত পাঠ শেষ করে রুকু এবং রুকু শেষ করে উঠে সিজদা  করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে নামায নষ্ট হবে এবং নতুন করে নামায আদায় করতে হবে। 


৪. প্রথম বৈঠকঃ  চার রাকা
আত ও তিন রাকাআত বিশিষ্ট নামাযে দু রাকাআত শেষ করে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে, সে পরিমাণ সময় পর্যন্ত বসে থাকা ওয়াজিব। 


৫. আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করাঃ  নামাযের উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব। আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তুমি আত্তাহিয়্যাতু পড়। সুতরাং আলোচ্য হাদীসটিই প্রথম ও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করে। 


৬. প্রকাশ্য কিরা
আত পাঠ করাঃ  যে সকল নামাযে প্রকাশ্য বা উচ্চঃস্বরে কিরাআত পাঠ করার নির্দেশ রয়েছে সেগুলোতে প্রকাশ্য কিরাআত পাঠ করা ওয়াজিব। যেমন-ফজর, মাগরিব, ইশা, জুমু দুঈদের নামায ও তারাবীর নামায। অবশ্য একাকী আদায় করলে কিরাআত উচ্চঃস্বরে পাঠ করা আবশ্যক নয়। 


৭. চুপিসারে কিরা
আত পাঠ করাঃ  যেমন নামাযে চুপে চুপে কিরাআত পাঠ করার নির্দেশ রয়েছে সেসব নামাযে নীরবে বা চুপে চুপে কিরাআত পাঠ করা ওয়াজিব। যেমন- যোহর ও আসরের নামায। 


৮. তা
দীলে আরকান বা ধীরস্থিরভাবে নামায আদায় করাঃ  নামাযের সব কাজ ধীরে-সুস্থে করতে হবে। যেমন রুকু ও সিজদা নিশ্চিত ও প্রশান্ত মনে তাড়াহুড়া না করে ভালোভাবে আস্তে আস্তে আদায় করা ওয়াজিব। 


৯. রুকু
থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোঃ  অর্থাৎ রুকু শেষে সিজদা করার পূর্বে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। 


১০. সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসাঃ  দু
সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব। 


১১. সালাম বলাঃ  নামায শেষে
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে নামায শেষ করা। ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহ আলাই এর মতে এটি ফরজ। 


১২. তারতীব ঠিক রাখাঃ  প্রত্যেক রাকা
আতের তারতীব বা ধারাবাহীকতা ঠিক রাখা অর্থাৎ আগের কাজ পেছনে এবং পেছনের কাজ আগে না করা। 


১৩. দু
আ কুনুত পাঠ করাঃ  বেতরের নামাযে দুআ কুনুত পাঠ করা ওয়াজিব। 


১৪. ঈদের নামাযে তাকবীরঃ  দুই ঈদের নামযে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলা ওয়াজিব।


নামাজের সুন্নাত সমূহ


১। আজান ও ইকামত বলা।  (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/৪৮)
২। তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত উঠানো।  (তানভীরুল আবসার মাআ শামী-২/১৮২)
৩। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক রাখা।  (ফাতাওয়া শামী-২/১৭১)
৪। ইমামের জন্য তাকবীর গুলিউচ্চ স্বরে বলা।  (হিন্দিয়া-১/১৩০)
৫। সানা পড়া।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭১)
৬। আউযুবিল্লাহ পড়া।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭২)
৭। বিসমিল্লাহ পড়া।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৪)
৮। অনুচ্চস্বরে আমীন বলা।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৩)
৯। সানা,আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ,আমীন অনুচ্চস্বরে বলা।  (হিন্দিয়া-১৩১)
১০। হাত বাধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।  (হিন্দিয়া-১/১৩১)
১১। পুরুষের জন্য নাভির নিচে,আর মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা।  (হিন্দিয়া-১/১৩০)
১২। এক রোকন থেকে অন্য রোকনে যাবার সময়
আল্লাহু আকবার বলা।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৩-৪৮৯)
১৩। একাকী নামাজ পাঠকারির জন্য রুকু থেকে উঠার সময়
সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদারব্বানা লাকাল হামদ বলা। ইমামের জন্য শুধু সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলা আর মুক্তাদির জন্য শুধু রব্বানা লাকাল হামদ বলা।  (মারাকিল ফালাহ-২৭৮)
১৪। রুকুতে
সুবহানা রব্বিয়াল আযীম বলা।  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৭৮)
১৫। সেজদায় বলা
সুবহানা রব্বিয়াল আলা  (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৯৪)
১৬। রুকুতে উভয় হাটু আকড়ে ধরা।   (বাদায়েউস সানায়ে- ১/৪৮৭)
১৭। রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা। আর মহিলার জন্য মিলিয়ে রাখা
  (শামী-২/১৭৩)
১৮। পুরুষের জন্য নামজে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখে আঙ্গুলগুলো কেব্লার দিক করে রাখা। আর মহিলার জন্য উভয় পা ডান দিকে বের করে জমিনের উপর বসা।  (বাদায়েউস সানায়ে-১/৪৯৬)
১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদের পর দুরুদ শরীফ পড়া।  (বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০০)
২০। দুরুদের পর দোয়া পড়া।   (হিন্দিয়া-১/১৩০)
২১। তাশাহ্যুদে
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সময় শাহাদাত(তর্জনি) আঙ্গুল দ্বারা কেবলার দিকে ইশারা করা।   (বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০১-৫০২)

নামাজের মুস্তাহাব সমূহ


১। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় উভয় পায়ের পাতার উপর, সেজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।   (বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০৩)
২। তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় হাত চাদর থেকে বাহিরে বের করে রাখা।
৩। সালাম ফিরানোর সময় উভয় কাঁধের উপর দৃষ্টি রাখা।   (মারাকিল ফালাহ-১৫১)
৪। নামাজে মুস্তাহাব পরিমান ক্বেরাত( ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাস্যাল,সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত।আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাস্যাল, সূরা তরেক থেকে বায়্যিনা পর্যন্ত। মাগরীবে কিসারে মুফাস্যাল সূরা যিলযাল থেকে শেষ পর্যন্ত।)পড়া।   (ফাতাওয়া শামী-২/২৬১)
৫। জুমআর দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ,লাম,মিম সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া।   (ফাতাওয়া শামী-২/২৬৫)
৬। যথা সম্ভব কাঁশি ও ঢেকুর চেপে রাখা।   (ফাতাওয়া শামী-২/১৭৬)
৭। হাই আসলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা।   (ফাতাওয়া শামী-২/১৭৭) 

নামাজের মাকরুহসমূহ

১. নামাযে কোন অসুবিধা হলে তাসবীহ বলা অথবা হাততালি দেয়া
عن سهل بن سعد رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا ناب احدكم شيء في صلاته فليسبّح فان التسبيح للرجال , والتصفيق للنساء.
"সাহল ইবনে সা
দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কারো নামাযের মধ্যে কোন সমস্যা হয়, তাহলে সে যেন সুবহানাল্লাহ' বলে। কারণ পুরুষের জন্য "সুবহানাল্লাহ' বলা এবং স্ত্রীলোকদের জন্য হাততালি দেয়া বিধেয়।   (মুজামুল কাবীর তাবারানী,হাঃ ৫৮৫৭) তবে অযথা হাততালি দেয়া নিষেধ ।


২. নামাযের মধ্যে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন 
عبد الله بن شدّاد, "سمعت نشيج عمر , وانا في آخر الصفوف يقراُ : إنَّماَ اَشْكُوْ بَثِّي وَحُزْنِي اِلىَ اللهِ.
তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ বলেন, আমি শেষ কাতারে দাঁড়িয়ে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পেলাম, তিনি তখন পড়ছিলেন (অর্থ)
আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি।    (সূরা ইউছুফঃ৮৬)(বুখারী)


৩. মুসল্লীর সামনে দিয়ে গমনকারীর পাপ 
عن ابو جهيم قال: رسول الله صلي الله عليه وسلم : لو يعلم المارُّ بين يدى المصلىِّ ماذا عليه , لكان ان يقف اربعين خيرا له من ان يمرَّ بين يديه.
আবু জুহায়িম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নামায আদায়রত মুসল্লীর সামনে দিয়ে গমনাগমন করে, সে যদি জানত যে তার এ কর্মে কঠিন অপরাধ, তাহলে তার জন্য চল্লিশ বছর যাবৎ দাঁড়িয়ে থাকা মুসল্লীর সামনে দিয়ে চলার চেয়ে উত্তম হতো।   (বুখারীঃহাঃ ৫১০)


৪. নামাযের মধ্যে কাঁকর সমান করা, কপাল মোছা ও অকারণে নড়াচড়া মাকরূহ
عن عبد الله بن بريدة, عن ابيه, رضي الله عنه, انَّ رسول الله صلي الله عليه وسلم قال: ثلاث من الجفاء: ان يبول اللرجل قاءئما, او يمسح جبهته قبل ان يفرغ من صلاته, او ينفخ في سجوده.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুরায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি কাজ অভদ্রতা ও অশালীনতার অন্তর্ভুক


নামাযের ফরজ সমুহ


নামায শুরুর পূর্বে:-

  1. শরীর পাক 
  2. কাপড় পাক 
  3. নামাযের স্থান পাক 
  4. সতর আবৃত করা 
  5. কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো 
  6. নিয়ত করা এবং 
  7. ওয়াক্ত মত নামায পড়া।

নামায শুরুর পর:-

  1. তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করা 
  2. কেয়াম বা দাড়ানো 
  3. কেরাত পড়া 
  4. রুকু করা 
  5. সেজদা করা এবং 
  6. নামাযে শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানো।

কোন ফরজ ছুটে গেলে নামাজ হবে না । পুনরায় নামায আদায় করতে হবে ।

নামাযে ওয়াজিব

নিম্নে নামাযের ওয়াজিব সমুহ বর্ননা করা হলো। ওয়াজিব সমুহ হলো:

  1. সুরা ফাতিহা পুরা পড়া(আলহামদুশরীফ)
  2. ফাতিহার সাথে অন্য সুরা মিলানো
  3. রুকু সেজদায় দেরী করা।
  4. রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া দাড়ানো
  5. দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা
  6. দর্মিয়ানী বৈঠক ( ২রাকাত নামায হলে এক বৈঠক, ৩ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈধক এবং ৪ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈধক করা)
  7. বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।
  8. ইমামের জন্য ক্বিরাত আস্তে পড়া( যহুর ও আছর নামায) এবং জোড়ে পড়া(ফজর, মাগরিব, ইশা)
  9. বিতরের নামাযে দোয়া কুনুত পড়া।
  10. দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবির বলা।
  11. প্রত্যেক ফরয নামাজের প্রথম ২ রাকাতকে ক্বিরাতের জন্য ঠিক করা।
  12. প্রত্যেক রাকাতের ফরজগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
  13. প্রত্যেক রাকাতের ওয়জিবগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
  14. আসসালামু আলাইকুম বলে নামায শেষ করা ।

ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদা সাহু দিতে হবে । না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না ।



 প্রশ্ন নামাজের ফরজ ওয়াজিব ও নামাজ ভঙ্গের কারন  কী


উত্তর :


নামাজ ভঙ্গের কারন সমূহ হল –

  1. নামাজে কিরাত ভূল পড়া ।
  2. নামাজের ভিতর কথা বলা
  3. কোন লোককে সালাম দেওয়া
  4. সালামের উত্তর দেওয়া
  5. ঊহ-আহ শব্দ করা
  6. ইচ্ছা করে কাশি দেওয়া
  7. আমলে কাছীড় করা যেমন- মোবাইল বন্ধ করা বা দীর্ঘ সময় নিয়ে শরীর চুলকানো, ইত্যাদি, তবে এক হাত দিয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করা যাবে
  8. বিপদে অথবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা
  9. তিন তাছবীহ পড়ার সময় পরিমাণ সময় ছতর খূলে থাকা
  10. মূকতাদী ছাড়া অন্য কারো থেকে নামাজ সম্পর্কিত কোন শব্দ গ্রহণ করা
  11. নাপাক জায়গায় সিজদাহ করা
  12. কিবলার দিক হতে সিনা ঘুরে যাওয়া
  13. নামাজে কুরআন শরীফ দেখে পড়া
  14. নামাজে শব্দ করে হাসা
  15. হাঁচির উত্তর দেওয়া
  16. নামাজে খাওয়া অথবা পান করা
  17. ইমামের আগে দাঁড়ানো




আল্লাহ আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায়ের তৌফিক দিন । আমিন ।

 

No comments:

Post a Comment