বিভিন্ন সময় আমরা অনেকেই ঋণগ্রস্ত হই। এ ঋণ প্রকৃতপক্ষে কারো জীবনের ক্ষেত্রেই সুখের খবর নয়। আর তাই জীবনে সব সময়ই আমাদের উচিত ঋণ থেকে মুক্ত থাকা। ঋণ থেকে মুক্তিলাভের জন্য হাদিস শরিফে বিশেষ ও কার্যকরি কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে।
ঋণ যথারীতি পরিশোধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ প্রদান করে ঋণদাতা গ্রহীতাকে উপকার ও অনুগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং ঋণগ্রহীতার ওপর এক অবধারিত দায়িত্ব। ঋণগ্রহীতার ওপর এটি ঋণদাতার অধিকার। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করার পূর্বে মারা যায়, তাহলে কাফন-দাফনের পর প্রথমেই তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত কিছু থাকে, তাহলেই কেবল তার ওয়ারিশদের মাঝে তা বণ্টন করা হবে এবং তাতে তার অসিয়ত কার্যকর হবে।
ঋণ পরিশোধের বিষয়টি একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি হাদিস শরিফে এর ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রকারান্তরে যথারীতি ঋণ পরিশোধের প্রতি উৎসাহিতও করা হয়েছে।
ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করে দেওয়া কেবল পাওনা আদায় নয়, বরং এটা ওয়াদা রক্ষা করার অন্তর্ভুক্ত। সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায় এজন্যে হাদিসে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
একপর্যায়ে উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেন, ‘আমি চাই না- উহুদ পাহাড় আমার জন্যে স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়া হলেও এর একটি দিনার আমার নিকট তিনদিনের বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্যে রেখে দিই সেটা ভিন্ন। -সহিহ বোখারি: ২৩৮৮
যারা সচ্ছল অবস্থায় শান্তিতে আছেন, তারা যেন কঠিন পেরেশানি, বড় বিপদ, বড় ঋণের বোঝা, অলসতা, অক্ষমতা ও কাপুরুষতার স্বীকার না হন, সেই জন্য নিয়মিত এই দুয়া পড়া উচিত। আর যারা এগুলোর শিকার হয়েছেন তারাও নিয়মিত এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবেন—
কখনো কখনো ঋণগ্রহীতাকে অসম্মানজনক আচরণের শিকার হতে হয়। তাই ঋণগ্রহীতা সবসময় চান দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে।
দ্রুত ঋণমুক্ত হতে সক্ষম হওয়ার জন্য রাসুল (সা.) কিছু আমল ও দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঋণ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে অত্যধিক আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
একবার ঋণ থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনারত অবস্থায় এক ব্যক্তি বলেন,
‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঋণ থেকে খুব বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন!’ নবী কারিম (সা.) বলেন- ‘মানুষ ঋণী হলে, কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে, রক্ষা করে না।’ (বোখারি, হাদিস নং : ২৩৯৭)
ঋণগ্রস্ত থাকার সময় রাসুল (সা.) সব সময় বেশি বেশি এই দোয়া পড়তেন-
‘আল্লাহুম্মা! ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মা’ছামি, ওয়াল মাদরামি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (বোখারি, হাদিস নং ৬০০৭)
পর্বত সমপরিমাণ ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া
একবার হজরত আলী রা.-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী রা. তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।
এরপর আলী রা. ওই ব্যক্তিকে উক্ত দোয়া পড়তে বলেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩, আহমদ ১৩২১)
(2) «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ».
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল)।
১৩৭-(২) “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”[2]
ফজিলত : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)
[1] তিরমিযী ৫/৫৬০, নং ৩৫৬৩। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮০।
[2] বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩। তাছাড়া পূর্বে পৃষ্ঠায় ১২১ নং এ গত হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন