কেন মুনাফা করতে পারে না স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা?✔

 জীবনে ব্যর্থতা নেই, তার সফলতাও নেই। যে মানুষ মাটিতে পড়ে, সেই আবার মাটি ধরে উপরে ওঠতেও পারে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “প্রিপারেশন ইজ দ্য হাফ ব্যাটল” অর্থাৎ প্রস্তুতিই যুদ্ধের অর্ধেক।


বিনিয়োগকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার মানেই গ্যামলিং। তাই লাভ করতে হলে গ্যামলার মামুদের পেছনে থাকতে হবে। আবার কিছু বিনিয়োগকারী বলছেন, “গ্যামলার ইজ দ্য বিউটি অব দ্য মার্কেট”। আবার একজন বিনিয়োগকারী বলেছেন, ব্যবসা মানে লাভ করা। যদি খারাপ শেয়ার কিনেও লাভ করা যায়, তাহলে ক্ষতি কি?


খারাপ শেয়ার মানে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন জানি না। তবে এই খারাপ বলতে যদি হয়, ঐ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে যারা আছেন তারা নিজেরাই শেয়ার কারসাজির সাথে জড়িত থাকেন, যে কোম্পানির আয় ভালো না, শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয় না। সময়মতো এজিএম করে না। কিন্তু তারপরও দাম বাড়ে! তাহলে বলব, ক্ষতি আছে। কারণ, এইসব শেয়ার কিনে আপনি দু-একবার মুনাফা করতে পারেন। কিন্তু ধরা আপনাকে খেতেই হবে। আর তাতে আপনি ফতুর হয়ে যাবেন।


যাইহোক বিনিয়োগকারীদের শুধু প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য নিয়ে অন্য একদিন লিখবো।


ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেন মুনাফা করতে পারে না? আগে একবার বলেছি, ব্যর্থতা ছাড়া সফলতা আসে না। কিন্তু শেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিজ ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হলে সেই ভুলের জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হয়। অর্থাৎ প্রচুর অর্থ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অজ্ঞতাজনিত বা আবেগতাড়িত এ ক্ষতির মাত্রা অনেক সময় এতো বেশি হয় যে, অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কেউ কেউ প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েন। ২০১০ সালের পুঁজিরবাজার ধ্বসে এখনো অনেক বিনিয়োগকারী ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। আবার অনেকে এ ব্যবসাই ছেড়ে দিয়েছেন।


অতএব, ভুল করে প্রচুর অর্থ লোকসান দিয়ে শেয়ার ব্যবসা শেখা অপেক্ষা, কোন্ কৌশলসমূহ বা ধারণাসমূহ শেয়ার ব্যবসায়ীর জন্য ক্ষতিকর তা যদি শেয়ার কেনাবেচা করার পূর্বে জেনে নিয়ে সতর্ক হওয়া যায়, তাহলে প্রচুর অর্থ ক্ষতি হওয়া থেকে যেমন রেহাই পাওয়া যায়, তেমনি অতি সহজে সফল ব্যবসায়ী হয়েও উঠা সম্ভব।


পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে একদল ব্যবসায়ী জয়ী হচ্ছেন। অন্য দল হচ্ছেন পরাজিত। যারা পরাজিত হচ্ছেন তাদের অনেকেই কিছুটা অজ্ঞাতসারে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চলেছেন। সামান্য সচেতনতার অভাব, সামান্য শ্রমহীনতা, অজ্ঞতা, দিক নির্দেশনার অভাব কিম্বা অতি তুচ্ছ কারণে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পুনঃ পুনঃ এত বেশি অর্থ লোকসান দেয়ার ঘটনা অন্য কোনো ব্যবসাতে নেই। কত সামান্য ভুলে শেয়ার ব্যবসাতে প্রচুর লোকসান দেয়া হয় ভেবে অনেকে অবাক হবেন। এখানেই একজন টাইকুন এবং একজন সাধারণ ব্যবসায়ীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য।


তাই নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি সফল হতেও পারেন-


এক) মনে রাখবেন, জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য শর্টকাট কোনো পথ নেই। প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে সাধনা, শ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়েই সফলতাকে ছিনিয়ে আনতে হয়।


দুই) একজন টাইকুন কোনো কিছুকেই নিছক ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক নন। তিনি শেয়ার ব্যবসায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে যত্নবান থাকেন, প্রতিটি বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন কিংবা উপযুক্ত পরামর্শ গ্রহণ করেন।


তিন) সফল ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকেও টাইকুন মানসিকতা অর্জন করতে হবে। মানব মনের সহজাত প্রবৃত্তিসমূহ; যেমন- আবেগ, লোভ, ভীতি প্রভৃতি বিষয় শেয়ার ব্যবসায়ীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। তাই জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো অসচেতন মুহুর্তে আবেগ, লোভ বা ভয়তাড়িত হয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পুনঃপুনঃ একইভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না।


চার) একটি বিশেষ শেয়ারের দর বিশেষভাবে অতি অল্প সময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার পর বাড়তি দরে ঐ শেয়ার ক্রয় করে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। “এ দামে শেয়ারটি আর পাওয়া যাবে না” শেয়ারের দর বৃদ্ধিজনিত সময়ের এ ধারণা প্রায়ই ভুল প্রমাণিত হয়।


পাঁচ) শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর নামবে এবং নামার পর উঠবে এটাই শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক ধর্ম। তাই দর উঠানামার ঐতিহাসিক ধরন ও কারণ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিশেষ সময়ের বিশেষ পরিস্থিতি যথাযথভাবে বিবেচনাপূর্বক এবং প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সর্বশেষ ব্যবসায়িক অবস্থা জেনে নিয়ে শেয়ারটি ক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।


ছয়) দর বৃদ্ধির পর শেয়ার ক্রয় করা এবং হ্রাসের পর শেয়ার বিক্রয় করার দেয়ার প্রবণতা পরিহার করুন। এভাবে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। শেয়ার বাজার টাইকুনরা কিন্তু এর বিপরীতধর্মী কৌশল অবলম্বন করে প্রচুর লাভ করেন। তাই ধৈর্য্য হারা হয়ে অতিরিক্ত বেশি দামে শেয়ার ক্রয় করা অনুচিত। বাস্তবে একটি শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর অন্য একটি ভালো শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই ধৈর্য্য ধরুন।


সাত) আবার কোনো কোনো শেয়ারের দর অনেক সময় অস্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি মাত্রার কমে যেতে থাকে। বহুবিধ কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কারখানা শ্রমিকদের ধর্মঘট, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, পণ্যের দাম কমে যাওয়া, বিকল্প পণ্য আবিষ্কারের ফলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়া, আধুনিক সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করার মতো যন্ত্রপাতি বা কারিগরি জ্ঞানের অভাব, সর্বোপরি কাঙ্খিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি বিষয়ে হতাশা, ব্যবস্থাপনার প্রতি অনাস্থা এ ধরনের বহুবিধ কারণে শেয়ারের দর দীর্ঘস্থায়ীভাবে হ্রাস পেতে পারে। এসকল বিষয় বিবেচনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাই কোনো শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান না করে ঐ শেয়ার কিনবেন না।

No comments:

Post a Comment