চাকরির ‘ভাইভা বোর্ডে’ সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞে’স করা ‘৭৭টি প্রশ্ন’

 

ভাইভা বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিন্তু নানাভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই আপ’নাকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবেন। একজন চাকরি-প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্য’তার পাশাপাশি তাঁর স্মার্টনেস, উপস্থাপন কৌশল, বাচন*ভঙ্গি এসব বিষয়ও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাইভা বোর্ডে ঢুকেই অনেকে নিজের অজান্তে প্রথমেই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করে বসেন।



নিয়োগদাতারা তেমন কোনো প্রশ্ন না করেই বা সৌজন্য’তার খাতিরে দু-একটি প্রশ্ন করেই বিদায় করে দেন। এ রকম পরিস্থিতি এড়াতে ও নিজেকে যোগ্য করে উপ’স্থাপন করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয় ; এখন আসি সরকারি এবং বেসরকারি চাকুরীর ভাইভা তে সাধারণত ফ্রেশার এবং চাকুরীর পূর্ব অভিজ্ঞ’দের যেসকল প্রশ্ন করা হয় সে প্রসঙ্গেঃ

ভাইবা বোর্ডে যে প্রশ্নগুলো প্রায়-ই করা হয়ঃ-

আপনার নাম কি?-
আপনার নামের অর্থ কী?-
এই নামের একজন বিখ্যাতব্যক্তির নাম বলুন?
আপনার জেলার নাম কী?-
আপনার জেলাটি বিখ্যাত কেন?-
আপনার জেলার একজন বিখ্যাতমুক্তিযোদ্ধার নাম বলুন?-
আপনার বয়স কত?-
আজ কত তারিখ?
আজ বাংলা কত তারিখ?-
আজ হিজরি তারিখ কত?-

আপনি কি কোনো দৈনিকপত্রিকা পড়েন?-
পত্রিকাটির সম্পাদকের নামকি?
আপনার নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করুণ।
আপনার জেলার নাম কি? জেলা সম্পর্কে ১ মিনিট বলুন।
আপনার জেলার বিখ্যাত কিছু মানুষের নাম বলুন এবং তারা কিকারনে বিখ্যাত তা আলোচনা করুণ।
আপনার বয়স, জন্ম তারিখ কত?
আপনি কি কোন দৈনিকপত্রিকা পড়েন? পড়লে সম্পাদকের নাম কি?
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা জানেন তা বলেন?
আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন।
আমরা আপনাকে কেন চাকুরিটা দিব?

বিয়ে করেছেন? কেন করেছেন/করেননি? বিবাহ সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনা কি?
আরো পড়াশুনা করার ইচ্ছা আছে কি? কেন নেই ইচ্ছা?
এর আগে কোথায় জব করেছেন? সেখানে কি ধরনের কাজ করেছেন?সে জবটি কেন ছেড়ে দিতে হলো?
আপনার নিজের সম্পর্কে (ইংরেজিতে/বাংলাতে) বলুন?
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলুন?
আপনার নিজের Strength / Weakness (SWOT: S-Strength ,W-Weakness, O-Opportunity, T-Threat) কি কি বলে মনে করেন?

একটি শব্দে/তিনটি শব্দে আপনি নিজেকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
যে পদের জন্য আবেদন করেছেন তাঁকে অন্যগুলোর সঙ্গে কিভাবে তুলনা করবেন?
আপনার তিনটি গুন ও দুর্বলতার কথা কি বলতে পারেন?
বর্তমান চাকুরীটি কেন ছেড়ে দিতে চান ?
ক্যারিয়ারের কোন বিষয়টি নিয়ে আপনি গর্ব করবেন?
কোন ধরনের বস ও সহকর্মীদের সাথে কাজ করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সফল হয়েছেন? কেন?
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে চিন্তা করেছিলেন?
যেকোনো ১ টি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ পেলে আপনি কোথায় চাকুরী করতেন?

আগামীকাল কোটি টাকা হাতে পেয়ে গেলে আপনি কি করবেন?
আপনার বস অথবা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্বারা কি কখনো সততা বিসর্জনের প্রস্তাব পেয়েছেন?
আপনার সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ার ১ টি কারণ বলতে পারেন?
এতদিন কাজ থেকে দূরে ছিলেন কেন?
এই ইন্টার্ভিউয়ের জন্য কিভাবে সময় পেলেন?
একটি সমস্যার কথা বলুন যার সমাধান আপনি নিজে করেছেন?
আপনি নেতৃত্ব দিয়েছেন বা দলগতভাবে কাজ করেছেন এমন একটি অবস্থার বর্ণনা দিন?

আগামী ৫-১০ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান
আপনাকে আমাদের কেন নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আমাদের কোম্পানিতেই কেন কাজ করতে চান?
হার্ড ওয়ার্ক এবং স্মার্ট ওয়ার্ক বলতে কি বুঝেন?
চাপের মধ্যে কাজ করা (Work under Pressure) বলতে কি বুঝেন?
ভ্রমন করাকে কিভাবে দেখছেন? প্রয়োজনে ভ্রমন বা ট্রান্সফার হওয়াকে কিভাবে গ্রহন করবেন?
আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?

কি আপনাকে রাগিয়ে তোলে?
কি আপনাকে প্রেরণা (Motivation) যোগায়?
আপনার জীবনের করা কিছু ক্রিয়েটিভ কাজের উদাহরণ দিন?
আপনি কি একা কাজ করতে পছন্দ করেন নাকি দলকে সাথে নিয়ে কাজ করা কে বেশি গুরুত্ব দেন?
আপনার করা কিছু দলগত কাজের উদাহরণ দিন?
লিডার হিসেবে নিজেকে আপনি ১ থেকে ১০ এর মাঝে কত দিবেন?
রিস্ক নিতে কি পছন্দ করেন?
আপনার পছন্দের কিছু চাকরি, অফিস লোকেশান এবং কোম্পানির উদাহরণ দিন? ৩২। আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কিছু বলুন?

আজ থেকে দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান নিজেকে?
আপনার আগের কোম্পানি থেকে কেনো চাকরি ছেড়ে দিতে (Resign) দিতে চাচ্ছেন?
কাজ থেকে কেন অনেক দিন বাহিরে ছিলেন?
অনেক গুলি কোম্পানি কেনো পরপর পরিবর্তন করেছেন?
আপনার করা সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ কি ছিলো?
সবচেয়ে কঠিন যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছিলেন তা কি ছিলো?
আপনাকে যদি আমরা নিয়োগ দেই কি কি পরিবর্তন আপনি আনতে পারবেন বলে মনে করছেন?

আপনার কি মনে হয় যে আপনি আপনার আগের কাজে আপনার সর্বোচ্চটা দিয়েছিলেন?
আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কাউকে রিপোর্ট করাকে কিভাবে দেখবেন আপনি? ৪২। আপনি কি আপনাকে সফল মনে করেন?
আপনার জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বিগত বছরে কি কি করেছেন?
আর কোথায় কোথায় চাকরির জন্য আবেদন করেছেন?
আমাদের কোম্পানির কারো সাথে কি পরিচয় আছে?
আপনাকে যদি নিয়োগ দেওয়া হয় কত দিন আমাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
আপনি কি কাউকে কখনো চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন? কেন করেছিলেন, কি পন্থা অবলম্বন করে করেছিলেন? তখন আপনার প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?
ব্যখ্যা করুন আপনি কিভাবে আমাদের জন্য মূল্যবান সম্পদ হবেন?
আপনার দেওয়া কোন সাজেশন ম্যানেজমেন্ট গ্রহন করেছে এমন একটি উদাহরণ দিন?
আপনার কলিগদের আপনার সম্পর্কে কি মন্তব্য?
নতুন টেকনোলজিকে কিভাবে গ্রহন করছেন আপনি? কি কি সফটওয়্যার এর সাথে আপনি পরিচিত?

আপনার শখ কি বা কি করতে ভালো লাগে?
আপনার নিজের জ্ঞান সম্পর্কে বলুন?
আপনি কে?


চাকরি সেবা ভাইভা বোর্ডের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

পাঁচটি প্রশ্ন যে কোন ইন্টারভিউ ভাইবা বোর্ডে করা হয়ে থাকে, যা অনেকেই এখনো জানেনা। নিচের অপশন থেকে আপনি এই পাঁচটি প্রশ্ন এবং এদের উত্তর গুলো জেনে নিন। যাতে করে আপনার পরবর্তী যে কোন ইন্টারভিউ তে খুব সহজে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।

১: আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন

সকল ভাইভা বোর্ডে প্রথমে যে প্রশ্নটি করা হয় সেটা হল আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন। অর্থাৎ আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে বলে। অনেকেই এটা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই সে কোথায় থাকে তার বাবার নাম মায়ের নাম লেখা পড়াসহ আরো অনেক কিছু বলে যেগুলোর কোন গুরুত্ব নেই। 

একটি ভাইভা বোর্ডে যখন ইন্টারভিউয়ার আপনাকে বলবে যে, আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন তখন আপনি আপনার অবশ্যই আপনার গুরুত্বপূর্ণ স্কিলস এবং আপনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে হবে। আপনি কখনই আপনার বাবার নাম মায়ের নাম বা আপনি কোথায় থাকেন এগুলো বলতে যাবেন না। তবে এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে আপনার প্রেজেন্ট ঠিকানা বলতে পারেন। তবে ভাইভাতে কখনই আপনার অন্যান্য কিছু বলতে যাবে না। 

শুধুমাত্র আপনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কিল যেগুলো আপনার চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে দরকারি সেগুলো বলবেন। অন্য কিছু আপনি বলতে যাবেন না, তাহলে ইন্টারভিউয়ার বুঝে নিবে আপনি স্মার্ট না এবং আপনার তাদের কোম্পানির জন্য যোগ্য নন।

২: আপনার লক্ষ কি? 

অনেক ভাইভাতে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা লক্ষ্য কি? আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি, আপনাকে যদি কখনো এরকম প্রশ্ন করা হয় তাহলে আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছেন সে কোম্পানির রিলেটেড একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলুন। 

আপনি ওই কোম্পানিতে ভবিষ্যতে কি কি করতে চান, এবং কি হতে চান এগুলো সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত বলতে পারেন। তাহলেই একজন ইন্টারভিউয়ার খুব সহজে বুঝতে পারবে আপনি একজন যোগ্য প্রার্থী।

৩: আমাদের কোম্পানি সেবা সম্পর্কে কি কি জানেন

সকল প্রতিষ্ঠানের ইন্টারভিউয়ার ভাইবা বোর্ডে একই প্রশ্ন করে, আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কি জানেন। অর্থাৎ যারা ইন্টারভিউ দিতে চায় তাদেরকে ৯৯% এ প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে। কখনো যদি আপনাকে এই প্রশ্ন করা হয় তাহলে আপনি কি করবেন? আপনি কখনো ভাইভা দিতে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জেনে যাবেন। 

ইন্টারভিউ ভালো করার উপায়

অর্থাৎ বর্তমান সময়ে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারেন। আপনি যে প্রতিষ্ঠান ইন্টারভিউ দিতে  দিতে যাচ্ছেন সে প্রতিষ্ঠান এবং তাদের প্রোডাক্ট কি বা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তাদের কোম্পানি রিলেটেড এগুলো সম্পর্কে অবশ্যই আপনি রিসার্চ করে যাবেন। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি সহজেই প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে পারবেন।

৪: আপনাকে আমরা কেনো নিয়োগ দিবো

সকল ইন্টারভিউয়ার ভাইভাতে এই প্রশ্নটি করে থাকে, যে আমরা আপনাকে কেন নিয়োগ প্রদান করব। এটা একটি ইন্টেলিজেন্স প্রশ্ন, সকল ইন্টারভিউয়ার রা দেখতে চায় তাদের চাকরি প্রত্যাশিত প্রার্থীদের মনবল বা তাদের ইচ্ছা আত্মবিশ্বাস কেমন। এটা জাস্ট আত্মবিশ্বাস যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্ন করা হয়। আপনাকে যদি কখনো এ প্রশ্ন করা হয় আপনি তখন অবশ্যই বলবেন যে আপনি আপনাদের কোম্পানির জন্য যোগ্য। 

অর্থাৎ আপনার এডুকেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড এবং আপনার দক্ষতা এবং আপনি কোম্পানির সাথে যায় এরকম কিছু দক্ষতা দেখাবেন। যাতে করে একজন ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারে তাদের কোম্পানির জন্য আপনি একজন যোগ্য প্রার্থী। তাই আপনাদের কম্পানিতে তারা আপনাকে নিয়োগ প্রদান করতে বাধ্য হবে, এমন কয়েকটি কারণ উল্লেখ করুন।

৫: আপনার বেতন কত চান

সকল ইন্টারভিউয়ার ভাইভা বোর্ডে এ প্রশ্নটি অবশ্যই করে। আপনার এক্সপেক্টেশন বেতন বা সেলারি কত? এটি একটি সহজ প্রশ্ন, আপনাকে ভাইভাতে কখনো এ প্রশ্ন করা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ভেবে কম্পানির পজিশন অনুযায়ী বেতন বলবেন। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যদি ফিক্সড সেলারি এমাউন্ট থাকে তাহলে ইন্টারভিউয়ার জানতে চাইবে না। 

আর যদি কোন নির্দিষ্ট বেতনের কথা উল্লেখ না থাকে তাহলে, আপনাকে যদি ইন্টারভিউয়ার ভাইভা বোর্ডে এরকম প্রশ্ন করা হয় যে আপনি আমাদের থেকে কত বেতন চান? সে ক্ষেত্রে আপনি বেশি বলতে যাবেন না এবং কম ও বলতে যাবেন না। আপনি কম বেতন বলতে গেলে তাহলে তারা ভেবে নেবে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং আপনার কনফিডেন্স কম, তাই অবশ্যই আপনি এমন একটি এভারেজ বেতন বলুন যেটা তদের পক্ষে দেয়া সম্ভব।

চাকরির ভাইভার জন্য এই সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আপনি ইন্টারভিউ দেয়ার আগে শিখে যাবেন। কিছু কমন প্রশ্ন রয়েছে এগুলা যেনে গেলে আপনার ইন্টারভিউ অনেক ভালো হবে এবং কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে সাহায্য করবে। ভাইভার প্রস্তুতি, ভাইভার কমন প্রশ্ন, Viva প্রস্তুতি, ভাইভা ভালো করার উপায়, ভাইভা টিপস।



No comments:

Post a Comment