ইসলামী জীবনই আদর্শ জীবন

প্রিয় নবী রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ রব্বুল আলামিন আল কোরআনে মানুষের জন্য যে জীবনবিধান দিয়েছেন তার চেয়ে আর কোনো সুন্দর বিধান হতে পারে না। আল্লাহ সুন্দর, তাঁর প্রদত্ত বিধানও সুন্দর। আল্লাহর দেওয়া এ বিধানকে যারা নিজেদের জীবনে ফুটিয়ে তুলবে তারা হবে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম মানুষ।’ তাহলে আমাদের জানতে হবে মুমিনের জীবনের সুন্দরতম বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে তা হলো- 

এক. ইমানের সৌন্দর্য : আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় তা মুখে ও অন্তরে স্বীকার করা, রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে তিনি যে জীবনবিধান দান করেছেন তা মেনে চলা, মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হওয়া, পরকালে বিশ্বাস করা, সৎকর্ম ও নেক কাজের জন্য জান্নাত এবং অসৎ কাজ ও বদ আমলের জন্য জাহান্নামি হওয়া।

এ জীবন দর্শনে বিশ্বাসীরাই হলো প্রকৃত মুমিন। মুমিনের জীবনের লক্ষ্যই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। সে আল্লাহকে ভালোবাসে এবং তাঁকে ভয় করে। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করে না। এবং আপদে বিপদে আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল করে এবং তাঁরই সাহায্য কামনা করে। বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহকে ডাকে ও তাঁর কাছে প্রার্থনা করে। এবং সব সময় আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

দুই : রসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর শেষ নবী ও রসুল। তাঁর প্রতি ইমান আনা ও তাঁর আদর্শ মেনে চলা ইমানের অন্যতম অংশ। কিয়ামত পর্যন্ত গোটা মানব জাতির জন্য তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র পথপ্রদর্শক। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল! তোমার মালিকের পক্ষ থেকে যা কিছু তোমার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তা তুমি অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। যদি তুমি তা না কর তাহলে তুমি তো মানুষের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিলে না।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ৬৭।

মানবসমাজের মধ্যে রসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহর পরই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে।

তিন : ইবাদতের সৌন্দর্য : একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করতে হবে। লোক দেখানো কোনো ইবাদত করা যাবে না। ফরজ আমলের পাশাপাশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যলাভের চেষ্টা করতে হবে। ইবাদতে একাগ্রতা থাকতে হবে এবং মনের সন্তুষ্টিসহকারে তা করতে হবে।

চার : আহকাম আরকানের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। আল কোরআনে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সালাত হলো মুমিনের মিরাজ। আল্লাহর কাছে দাসত্ব প্রমাণের সবচেয়ে বড় উপায় সালাত। পবিত্র পোশাক পরে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সময়ের ভিতর নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে ও কোরআন তিলওয়াতের প্রতি যত্নবান হবে। রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কর।’ 

সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৮-৭৯। এ ছাড়া আমাদের ইসলামী জীবন গড়ার জন্য আরও যা করতে হবে তা হলো- আল কোরআন নির্ভুলভাবে পাঠ করা, কোরআন-হাদিসের আলোকে জীবন গড়া, পিতা-মাতার আদেশ মেনে চলা, তাদের কষ্ট না দেওয়া, হালাল-হারাম বেছে খাদ্য খাওয়া, সালাম বিনিময় করা, প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া, বড়দের সম্মান করা, গিবত বা পরচর্চা না করা, সুদের হাত থেকে বেঁচে থাকা, সুবিচার নিশ্চিত করা, দয়া ও ক্ষমা করা, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।


ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক

ইসলাম একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ- আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, অনুগত হওয়া, কোনো কিছু মাথা পেতে নেয়া। এটি সালম, সিলম বা সিলমুন মূল ধাতু থেকে এসেছে। যার এক অর্থ- শান্তি, সন্ধি, সমর্পণ ও নিরাপত্তা। যেহেতু আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয়, তাই একে ইসলাম বলা হয়।

অন্য কথায়, ইসলামের অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মেনে নেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা অর্জন করা। ‘ইসলাম’ শব্দটিতে আল্লাহ তাআলার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহীত রয়েছে। আরবি ভাষায় ইসলাম বলতে বোঝায় আনুগত্য, বাধ্যতা ও আত্মসমর্পণ। ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে হয়।

অতএব ইসলামের মূল মর্মবাণী হলো মানুষের সর্বস্ব আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে দেয়া। তার সব শক্তি, যাবতীয় কামনা-বাসনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাব-আবেগ, তার সব প্রিয় বস্তু; এক কথায় মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহ তাআলার কাছে অর্পণ করার নামই হলো ইসলাম। কুরআনের ভাষায় ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া যে জীবনাদর্শের লক্ষ্য তার-ই নাম ইসলাম। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে, প্রতিস্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধিনিষেধ পালন করা; তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা এবং এ লক্ষ্যে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার নামও ইসলাম।

ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত রাখার নির্দেশ রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির আদর্শ। মানুষ যদি সত্যিই শান্তি পেতে চায় তবে তার নিজের ইচ্ছা মতো জীবন যাপন না করে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলতে হবে। তাই আল্লাহ তার প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার নাম রেখেছেন ইসলাম।

ইসলাম শব্দের অর্থের মধ্যে বিশেষ গুণের পরিচয় পরিস্ফুটিত। ইসলামই শুধু ইসলামের তুলনা। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়, কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত। ইসলাম নামটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। ইসলামের সঙ্গে রয়েছে মানুষের জীবনের সুগভীর সম্পর্ক।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সব সংঘাত সংঘর্ষের চিরন্তন ও মহাসমন্বয় হচ্ছে ইসলাম। জীবনাদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার সঠিক সমাধান। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপায়।

ইসলাম মানুষের চলার পথের সন্ধানদাতা, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন তথা মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র পন্থা। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীকার। ইসলাম মানুষের সঠিক পথের দিশারী, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে একাধিক স্থানে এ বক্তব্য তুলে ধরেছেন-

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯)

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে (জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে) পূর্ণাঙ্গ করে দিলামতোমাদের প্রতি আমার অবদান পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)

কুরআনুল কারিমের আয়াতে কারিমা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা ইসলামকে মানবতার জন্য নেয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন, যাতে রয়েছে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান। এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে- ইসলাম গ্রহণ করলে আমাদের কী লাভ?

এক কথায় বলা যায়-

ইসলাম গ্রহণ করলে অনেক লাভ রয়েছে। প্রথমত ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেছেন-

‘বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে আর তার ইসলাম খাঁটি হয়, আল্লাহ তা দ্বারা তার প্রায়শ্চিত্ত করে দেন সে আগে যা অপরাধ করেছে। অতপর তার সৎকাজ হয় অসৎ কাজের বিনিময়; সৎকাজ তার দশগুণ হতে সাতশ গুণ বরং বহু গুণ পর্যন্ত আর অসৎকাজ তার একগুণ মাত্র, তবে আল্লাহ যাকে ছেড়ে দেন তার একগুণের শাস্তিও হবে না।’ (বুখারি)

প্রকৃত পক্ষে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করে তবে সে মূলত নিজেকেই অনুগ্রহীত করে। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-

يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُل لَّا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُم بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

তারা ইসলম গ্রহণের মাধ্যমে (মুসলমান হয়ে) আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। (হে রাসুল! আপনি) বলুনতোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেনযদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।’ (সুরা হুজাত : আয়াত ১৭)

সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব সম্মানিত নবি-রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ধর্ম  তথা সত্য জীবন ব্যবস্থার দিকে আহ্বান করেছেন। এ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম সত্য ও ন্যায়ের শাশ্বত সৌন্দর্যের আলোকে পথ দেখিয়ে চলেছে সমগ্র মানব জাতিকে।

মানুষের মধ্যে যারা প্রকৃত জ্ঞানী ও অনুসন্ধানী, কেবল তারাই খুঁজে পেয়েছেন সেই সত্যের ও শান্তির সন্ধান, খুঁজে পেয়েছেন একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহকে এবং জেনেছেন নিজের চিরস্থায়ী গন্তব্যের প্রকৃত ঠিকানা।

অত্যাধুনিক সভ্যতা ও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধির এ যুগে মানুষ আজ কঠিনতম বাস্তবতার শিকার। সবাই চায় সচ্ছলতা, চায় শান্তি। বস্তুত মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেতে আত্মিক শান্তির পিয়াসী। বেঁচে থাকার জন্য এটি অপরিহার্য।

মহান আল্লাহ তাআলা মনোনীত পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’, সেই অনন্ত শান্তির বাণীই প্রচার করছে। তাই তো মানুষ শাশ্বত ধর্ম দ্বীন ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর আদর্শ যুগ যুগ ধরে গ্রহণ করে আসছে।

ইসলাম যে দিনের পর দিন উন্নতি করেই যাচ্ছে এর কারণ কি? দিনের পর দিন ইসলামের যে উন্নতি হচ্ছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে- ইসলামের তুলনাহীন আদর্শ ও সুমহান শিক্ষা। ইসলামের উন্নতি সম্পর্কে অনেকেই অনেক মন্তব্যও করেছেন। যেমন-

- বিখ্যাত দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, ‘আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রচারিত ধর্ম ‘ইসলাম’ আগামী দিনের ইউরোপবাসীদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে। ইতিমধ্যে আজকের ইউরোপবাসী ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করেছে।’ (জেনুইন ইসলাম)

বর্তমান বিশ্ব, বিশেষত খ্রিষ্টবাদের প্রাণকেন্দ্র ইউরোপ ও আমেরিকার দিকে তাকালেই জর্জ বার্নার্ড শ’র  সেই ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতার প্রমাণ মেলে। সত্য আর শান্তির সন্ধানে মানুষ পাগলপারা হয়ে ইসলামের সঠিক বিশ্বাসের দিকেই ছুটে আসছে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।


মানব জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ


প্রসঙ্গত একটি কথা এখানে বলে রাখি। কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়নের একটি স্বাভাবিক পন্থা আছে। সেই পন্থা এই নয় যে, একজন মানুষ হঠাৎ করে কুরআন মাজীদের কিছু তরজমা সংগ্রহ করল, হাদীসের কিছু কিতাবের তরজমা সংগ্রহ করল এবং পড়া শুরু করে দিল। যা বুঝে আসল একেই কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা মনে করল। জগতের কোনো বিষয়ের অধ্যয়নেরই এটা স্বাভাবিক পন্থা নয়। 

যে কোনো বিষয়েরই অধ্যয়নের স্বাভাবিক পন্থা হল, যারা ঐ বিষয়ের বিজ্ঞ-পারদর্শী তাদের কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা অর্জন করা। ঐ শাস্ত্রের সাথে চিন্তা ও রুচির আত্মীয়তা সৃষ্টি করা। এরপর বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুসারে অধ্যয়ন করা এবং ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। এ কারণে কুরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহকদের নিকট থেকেই কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষাগুলো আগে গ্রহণ করতে হবে।

 কুরআনের মৌলিক শিক্ষা কী, রুচি ও চেতনা কী, দৃষ্টিভঙ্গি কী- এই বিষয়গুলো সহজ-সরলভাবে তাঁদের নিকট থেকে গ্রহণ করতে হবে। যখন হৃদয় প্রস্তত হবে, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হবে তখন সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়ন করতে পারবেন এবং আল্লাহ চাহে তো সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করবেন। 

তখন ঈমানের স্বাদ অনুভব করবেন। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠবেন। এই বোধ ও উপলব্ধি যেমন আপনার অন্তরকে শীতল করে দিবে তেমনি আপনার চোখ থেকে অশ্রু ঝরাবে; এ অশ্রু আনন্দের। এ অশ্রু প্রাপ্তির। কিন্তু এখন তো অবস্থা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কে পশ্চিমা চিন্তা-ধারা, আমাদের দৃষ্টিতে পশ্চিমের চশমা, আমাদের হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসে আছে ভোগবাদ ও বস্তুবাদ। আমাদের স্বভাব-চরিত্রে অহং ও ঔদ্ধত্য।

 এইসব আগাছায় আকীর্ণ চিন্তা ও হৃদয়, স্বভাব ও চরিত্র নিয়ে যখন কেউ কুরআন-সুন্নাহর তরজমা পড়ছি, কুরআনের বাণী ও বিধান পাঠ করছি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সুন্নাহ পাঠ করছি তখন এর সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছি না। আমরা শব্দ পড়ছি কুরআনের, কিন্তু অর্থ গ্রহণ করছি ঐটা, যেটা আমার চিন্তা ও দর্শনের অনুকূল। বস্তুবাদ ও ভোগবাদের অনুকূল।

 পশ্চিমা দর্শনের আলোকে আমরা কুরআন-সুন্নাহর ব্যখ্যা পেতে চাইছি। কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা ঐ সকল দর্শনের অসারতা উপলব্ধি করতে পারছি না। কাজেই প্রথম প্রয়োজন, চিন্তা ও হৃদয়কে আগাছামুক্ত করা। 

তাহলেই মুক্তমনে উন্মুক্ত হৃদয়ে কুরআন-সুন্নাহর বাণী শ্রবণ করা সম্ভব হবে। এটা হবে ঐ শ্রবণ, যা চিন্তাকে আলোকিত করে এবং হৃদয়কে আন্দোলিত করে। ঐ শ্রবণ, যা ফিক্হ ও প্রজ্ঞা দান করে এবং জীবনে বিপ্লব সাধন করে। তো কুরআন-সুন্নাহ থেকে আলো গ্রহণের স্বাভাবিক পন্থা হল, কুরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহকদের সাহচর্য অবলম্বন করা।

 তাদের সাহচর্যের দ্বারা নিজের চিন্তা ও মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করা। চিন্তা ও মস্তিষ্ক থেকে বাইরের উপাদানগুলো বের করা। এরপর যখন কুরআন পড়ব, সুন্নাহ পড়ব তখন কুরআন-সুন্নাহর সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হব।

 যাই হোক, এটি একটি প্রাসঙ্গিক কথা ছিল, যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হল, আল্লাহ তাআলা কিতাব পাঠিয়েছেন। শুধু কিতাব পাঠাননি কিতাবের সাথে সেই কিতাবের আমলী নমুনাও পাঠিয়েছেন। সেই আমলী নমুনা হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।


দরুদ পাঠকারীর জন্য রয়েছে অসামান্য ফজিলত। বিশ্বনবির প্রতি দরুদ পাঠে সম্পদে বরকত হয় !!! কয়েকটি দরুদ শরীফ ।


আমাদের সঙ্গেই থাকুন। 

সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

No comments:

Post a Comment