জ্ঞান অর্জন করা মুসলমানের অপরিহার্য দায়িত্ব , ঈমানদার ব্যক্তি জ্ঞানী হবে-এটাই ঈমানের দাবি।

 

জ্ঞান হল মানুষের জীবন চলার পথে আলো। আলো ছাড়া যেমন কেউ পথ  চলতে পারে না, তেমনি জ্ঞান ছাড়াও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যায় না।

ঈমানদার ব্যক্তি জ্ঞানী হবে-এটাই ঈমানের দাবি। পবিত্র কোরানের বহু আয়াতে জ্ঞানার্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদীসের বিশুদ্ধ  যত কিতাব রয়েছে তার সবগুলোতে কিতাবুল ইলম্ বা জ্ঞানার্জন বিষয়ক অধ্যায় রয়েছে। যাতে উপস্থাপিত হয়েছে এই বিষয়ের ওপর আল্লাহর নবীর (সা.) মুখ নিঃসৃত শত শত হাদীস।

ইসলামী আইন শাস্ত্রের যত গ্রন্থ রয়েছে তার সবগুলোতে জ্ঞানার্জন বিষয়ক অধ্যায় কিতাবের অগ্রভাগে সন্নিবেশিত হয়েছে। পবিত্র কোরানে এরশাদ হয়েছে, ‘‘পাঠ করুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আলাক, আয়াত-১)।

জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রশংসায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন, “আর আমি ওই দৃষ্টান্তগুলো মানুষের উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশে বর্ণনা করে থাকি। বস্তুত ওইসব দৃষ্টান্ত কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বোঝে” (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৩)।

মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, ‘‘আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞানী নয় তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার, আয়াত-৯)।

কোরানে পাকের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে “হে নবী বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে?” (সূরা রাদ, আয়াত-১৬)।

জ্ঞানী লোকদের আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন”(সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১)।

জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) বর্ণনা করেন, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ” ইবনে মাজাহ।

উল্লেখ্য, এখানে জ্ঞান বলতে ইসলামী জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, একজন মুসলমানের ওপর আল্লাহর কি কি হুকুম রয়েছে এবং তা রাসূল (সা.) এর নিয়ম অনুযায়ী কিভাবে পালন করা যায় তা জানতে হবে। না জানলে গুণাহ হবে।

আল্লাহর রাসূল (সা.) এর পবিত্র মুখ থেকে আরও উচ্চারিত হয়েছে, ‘‘রাতের কিছু সময় জ্ঞান চর্চা করা পূর্ণ রাত্রি (এবাদতে) কাটানো অপেক্ষা উত্তম” (দারেমী)। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যার মৃত্যু এমন সময় এসে পৌঁছেছে যখন সে ইসলামকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত বেহেশতে তার ও নবীদের মাঝে মাত্র এক ধাপ পার্থক্য থাকবে। (দারেমী)।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অনুসন্ধানে বের হয়েছে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে সে পর্যন্ত না ফিরে আসবে (তিরমিযী)। অর্থাৎ, জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত থাকা আল্লাহর রাস্তায় থাকারই নামান্তর।

জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর নবী আরও বলেন, জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা (জ্ঞানহীন) ইবাদতকারীর ওপর এরূপ যেরূপ আমার মর্যাদা তোমাদের সবার ওপর। অতপর রাসূল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা দিয়ে থাকে তার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তালা, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমানবাসী, জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপীলিকা পর্যন্ত দোয়া করে (তিরমিযী শরীফ)।

বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের উদ্দেশে কোনো পথ অবলম্বন করলো আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন।

যখনি কোনো একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো একটি ঘরে (মসজিদ, মাদ্রাসায়) একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং তা পরস্পর আলোচনা করতে থাকে তখনি আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের ওপর স্বস্তি ও শান্তি অবতীর্ণ হতে শুরু করে, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে ফেলে, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে ফেলে এবং আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে এসব বান্দার আলোচনা (প্রশংসা) করেন। যার কর্ম তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে দিতে পারে না (মুসলিম শরীফ)।

হযরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, প্রিয় রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তালা যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের (ইসলামের) সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন (বুখারী, মুসলিম)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

সব জ্ঞানের উৎস আল্লাহ্

মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ জ্ঞান সব বিষয়ে মানুষকে নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত করে না। তা মানুষকে ভুল পথেও পরিচালিত করে। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা, ‘...তোমাদের (মানুষকে) অতি সামান্য জ্ঞান দেয়া হয়েছে।’ (সূরা বনি ইসরাইল ৮০)।

অনন্ত জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবি : সর্বশক্তির আধার যেমন আল্লাহ, তেমনি সর্বজ্ঞানের উৎস ও স্বয়ং মহাজ্ঞানী আল্লাহ। অনন্ত জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবি মহাজ্ঞানী আল্লাহর হাতেই। ‘তিনি (আল্লাহ তায়ালা) যা ইচ্ছা করেন, তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না।’ (সূরা বাকারা-২৫৫)। মহান স্রষ্টার সৃষ্টিতে জ্ঞানী-গুণী যারা গবেষণা করেন, আবিষ্কার করেন, সেসব গবেষণার উপাদানের স্রষ্টাও স্বয়ং আল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালার সিফাতি বা গুণগত নাম হলো ‘আলিম’ অর্থাৎ আল্লাহ মহা ইলমের অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক হচ্ছেন নূরে মুতলাক অর্থাৎ এক সত্তা যা সম্পূর্ণই নূর। তাই তাঁর সব সিফাত বা গুণাবলিও নূর। ইলম বা জ্ঞানও আল্লাহপাকের একটি নূর। আর যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করল, সে নবীদের মিরাছের বড় একটি অংশ পেয়ে গেল। আল্লাহ পাকের ঘোষণা ‘তিনিই গায়েবের একমাত্র জ্ঞানী। তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত কোনো রাসূল ব্যতিরেকে। তখন তিনি সেই রাসূলের অগ্রে ও পশ্চাতে রক্ষী নিযুক্ত করেন।’ (সূরা জিনÑ ২৬, ২৭)।

আমি কিছুই জানি না : এই পৃথিবীর জ্ঞানীকে জ্ঞানের চূড়ান্তপর্যায়ে গিয়ে সৃষ্টি রহস্য ও বাস্তব স্বরূপ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী নিউটনের শেষ কথা ছিল, ‘আমি জ্ঞান সমুদ্রের বালুকণার বেলায় দাঁড়িয়ে শামুক-ঝিনুক নিয়ে খেলা করেছিলাম, অথৈ জ্ঞানসমুদ্র অজানাই রয়ে গেল।

 জগৎখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিসও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন : ‘অর্থাৎ আমি একটি বিষয় জানি যে, আমি কিছুই জানি না।’ আসলে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে অপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ পাক যতটুকু ইচ্ছে করেন ততটুকুই মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং ততটুকুই তার পক্ষে জানা সম্ভব হয়।

আমরা জানি না : জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই এই পৃথিবীর জ্ঞানী, গুণী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জ্ঞান নিয়ে অহঙ্কার করা সাজে না। ‘আমরা জানি না’Ñ সব জ্ঞানী-গুণী ও বৈজ্ঞানিকরা আজ আকুণ্ঠ চিত্তে এই কথাই বলছে। যার মধ্যে রয়েছে মানবীয় জ্ঞানের অপূর্ণতারই সুর। জ্ঞান-বুদ্ধি-গবেষণা দিয়ে মানুষ চির অজ্ঞাত চির অজেয়কে ধরতে পারছে না কখনো। যতই সামনে এগোচ্ছে, লক্ষ্যবস্তু ততই দূরে সরে যাচ্ছে। তাই তো এত শূন্যতা! তাইতো এত হা-হা-কার। তাই তো আল্লাহ পাক তাঁর কাছে জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছেন : ‘হে আমার বর! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও।’ (সূরা তাহা-১১৪)।

আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞান : বোখারি শরিফে উল্লেখ আছে : ‘মানব জাতির মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী কে?’ এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মুসা আ: ও খিজির আ:-এর মধ্যে কথোপকথনের সময় একটা পাখি এসে তার চঞ্চু দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি পান করল। তা দেখে খিজির আ: বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞান এই পাখিটির সাগর থেকে তার চঞ্চুতে যে পরিমাণ পানি উঠল, তার চেয়ে বেশি নয়।’ আল্লাহ পাকের মনোনীত বান্দাদের জ্ঞান যদি এই হয়, তাহলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ, জ্ঞানের বড়াই করছি, আমরা কত সামান্য জ্ঞানের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সীমাহীন গায়েবি রহস্যের সংবাদ কিয়দাংশই নবী-রাসূলদের জানিয়েছে ওহির মাধ্যমে। তাই বলে গায়েবের আলিম কাউকে করেননি। ‘পৃথিবীতে অমুসলিমদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে কুরআন, হাদিস গবেষণা করা হচ্ছে। বড় বড় ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে। 

তারা কুরআনের তাফসির ও হাদিস বিষয়ে অনেক জ্ঞান রাখে। দক্ষ আলেমরা তাদের কাছে ফেল। কিন্তু ঈমানি দৌলত তাদের নেই।’ তাদের এ জ্ঞান হলো মালুমাত বা জানা কিন্তু মানা নয়। অর্থাৎ কুফর ও গোনাহের অন্ধকার প্রকৃত ইলম বা জ্ঞান নয়।

যুগ যতই আধুনিক হোক : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগ যতই আধুনিক হোক, চিন্তা ও গবেষণা যতই ধারালো হোক, যুক্তি জ্ঞান ও গোঁড়ামি দিয়ে পরকালের মুক্তির জ্ঞানার্জন সম্ভব নয় এবং যুক্তিও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন মহাজ্ঞান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিধি-বিধান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গাইড লাইন, আল কুরআন মেনে, রাসূল সা:-এর নির্দেশিত পথে চলা। জ্ঞান তখন প্রত্যক্ষ অনুভূতির মধ্যে এসে পূর্ণ হবে। অন্তরে তখন চির আধুনিক ইসলামের জ্ঞানের আলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠবে। ঈমান ও একিনের মূল কথা এটাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে সিরাতুল মুসতাকিম বা জ্ঞানের সরল-সোজা পথ, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নয়।

কসমিক রেডিয়েশন, ইলেকট্রন-প্রোটন, অনু-পরমাণু শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যক্ষ, রূহ, মানব সৃষ্টি এবং বিশ্ব জগতের পরতে পরতে প্রবেশ করুন, চিন্তা ও ফিকির করুন; দেখবেন বিশাল বিশ্ব প্রকৃতি অত্যাশ্চর্য মোজেজায় পরিপূর্ণ!

জ্ঞানের দরিয়ায় হাবুডুবু খাওয়া : জ্ঞান বা ইলম অর্জনই প্রকৃত জ্ঞানীদের কাজ। একজন জ্ঞানী (মৃত্যু পর্যন্ত) আজীবনই ছাত্র। বিশ্বজোড়া জ্ঞানের পাঠশালায় যে একজন গণ্য ছাত্রমাত্র। একটি ফুল, একটি বৃষ্টির ফোটা, একটি পাতা, থেকেও জ্ঞানার্জনের অনেক উপাদান রয়েছে। সৃষ্টির যে দিকে দৃষ্টি যাবে, যে বস্তুতে দৃষ্টি যাবে, সেখানকার থেকেই জ্ঞান আহরণ করা যাবে। জ্ঞানীর প্রতিটি দৃষ্টিই ইলম বা জ্ঞান অর্জনের দৃষ্টি। বিশ্বজগতের এই জ্ঞানের দরিয়ায় জ্ঞানীরা সর্বক্ষণ হাবুডুবু খাচ্ছেন।

প্রকৃত জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : তারা সুখে-দুখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারী, সবরকারী এবং শোকর গোজার বান্দা। তারা আল্লাহর মহব্বতে বা শাস্তির ভয়ে ক্রন্দনকারী, তওবাকারী, জিকিরকারী ও মৃত্যুর স্মরণকারী। উল্লিখিত সাত শ্রেণীর মানুষ মহাজ্ঞানী আল্লাহর জ্ঞানের দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাদের এটাই সিলমোহর।

জ্ঞান গোপনকারীর প্রতি অভিশাপ : আল কুরআনের আয়াতে রয়েছেÑ মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের কথা। রয়েছে ইলমুল লিয়ান শরিয়াত এবং ইলমুল কালব বা মারেফাতের জ্ঞানের কথা, শান্তি ও কল্যাণের সহজ-সরল পথের দিশা এবং প্রিয় বান্দাদের মুক্তির কথা। যা জানা, বোঝা ও মানা সবার জন্য ফরজ। এ জ্ঞান মানুষকে আল্লাহ ভীরু, মুত্তাকি ও প্রেমিক বানায়। আল কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা, জ্ঞানানুযায়ী নেক আমল করে সুন্দর জীবন গঠন করা এবং অন্যকে এর দাওয়াত দেয়া জিন ও ইনসানের শ্রেষ্ঠ কর্ম। ‘এক কল্যাণময় কিতাব (আল কুরআন), যা আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন বা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই গ্রহণ করে উপদেশ।’ (সূরা ছোবাহ-২৯)’। নিশ্চয়ই এর মাঝে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা হিজর-৭৫)।

জ্ঞানান্বেষণকারীদের জন্য সুসংবাদ : যে ব্যক্তি জ্ঞান পায়নি, সে কি পেয়েছে? যে ব্যক্তি ইলম বা জ্ঞান পেয়েছে তার পাওয়ার কি বাকি আছে? যদি তুমি নিঃস্ব হয়ে যাও, তবে জ্ঞানই হবে তোমার ধন। আর যদি ধনাঢ্য হয়ে যাও, তবে জ্ঞানই হবে তোমার অঙ্গ সজ্জা, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাকে গাফেল করবে না। জ্ঞানী ও মূর্খ কোনো দিন সমান নয়। ‘দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়; সমান নয় অন্ধকার ও আলো, সমান নয় ছায়া ও রৌদ্র।’ (সূরা ফালির ১৯, ২০, ২১)।

 স্রষ্টাকে না মানা জ্ঞান বুদ্ধিপালিত ও রিপুতাড়িত জ্ঞান, যা জীবনকে লাগামহীন করে, ভুল সিদ্ধান্তে ও ভুল পথে পরিচালিত করে জ্ঞানীকে। ‘যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় আরো উন্নতি দান করবেন।’ (সূরা মুজাদালাহ-১১), ‘যারা জানে (জ্ঞানী) এবং যারা জানে না (মূর্খ) তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন জ্ঞানী লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণকরে।’ (সূরা জুমার-৯)। যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে পথ চলে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুমিনের হারান সম্পদ : জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সবার জন্য। 

আল্লাহর রাসূল সা:- বলেছেন, ‘তালাবুল ইলমে ফারিদাতুল আলা কুল্লি মুসলিমিন।’ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ইকরা, তখন তিনি সব মানুষের জন্য পড়া ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন। মুমিন বান্দা আল্লাহর খালাফা। দুনিয়াতে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থেকে কখনো ইমাম গাঞ্জালি, হাফিজ, রুমি, শেখ সাদি ইকবাল, ইবনে সিনা, আল কেনি, জাবের আল হাইয়ান, আল রাজি, ইমাম বুখারি আহম্মদ ইবনে হাম্বল, ইমাম শাফেরি প্রমুখর মতো তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। ইসলামের এই ক্রান্তিলগ্নে মুসলমানদেরকে শত সহস্র বাধা ডিঙ্গিয়ে আল্লাহর রশিকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়িয়ে ধরে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ঈমানকে পূর্ণতা দেবে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে করবে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মতো উন্নতি হবে, চিন্তার যত প্রসার ঘটবে, বিজ্ঞানময় আল কুরআনের জ্ঞান ততই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

উপকারী ও বিশেষ জ্ঞান : যে উপকারী জ্ঞান এবং বিশেষ জ্ঞান রয়েছে আল কুরআনের পাতায় পাতায়, নবী করিম সা:-এর আমীয় বাণীতে সাহাবি, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িনদের আদর্শে, আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টিতে, আল্লাহপাগল জ্ঞানীদের বিভিন্ন গ্রন্থে, তা ঈমানকে সুদৃঢ় করে এবং বুদ্ধিভিত্তিক গবেষণা কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য তা উপকারী এবং বিশেষ জ্ঞান। ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তুপ্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।’ (সূরা বাকারা-২৬৯)।

মানুষ যতই উন্নত ও শক্তিশালী হোক : আসলে মানুষ যত জ্ঞান-গুণী হোক না কেন, মানুষের দ্বারা মহাজ্ঞানী ও মহা বিজ্ঞানী, আলিম-হাকিম, আল্লাহর অনন্ত জ্ঞানের অনুমাত্র ধারণ করা সম্ভব নয়। এ জন্যই আধুনিক বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, ‘বিজ্ঞানের জ্ঞানে মানুষ যতই উন্নত ও শক্তিশালী হোক না কেন, আল্লাহর অনন্ত জ্ঞানের অনুমাত্রও তারা ধারণ করতে সক্ষম নয়।’ আল্লাহপাক স্বয়ং ঘোষণা দিয়েছেন : ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর আছেন এক মহাজ্ঞানী (আল্লাহ)’ (সূরা ইউসুফ-৭৬)।


আমাদের সঙ্গেই থাকুন। 

সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।


No comments:

Post a Comment