সবকিছু ত্থেকেও কেন ভয়ানক হীনমন্যতায় ভোগে নারীরা! জানেন কী ?

 

আধুনিক জীবন-যাপনের সব উপাদান আছে সংসারে। স্বামীর আয় ভালো। গৃহিনী নিজেও দেখতে সুন্দরী।  আশে পাশে চোখ খুলে তাকালেই দেখবেন অনেক মিলবে ! আপাতদৃস্টিতে বাইরে থেকে প্রায় সবারই মনে হয় ‘দারুন সুখি’ অবশ্যই।

তবে, আপনার ধারনা সবক্ষেত্রে যদি সত্যি হতো তাহলে অনেক ভালোই হতো সবার জন্য। কিন্তু আশংকার বিষয় হচ্ছে আপনার-আমার ধারনার সাথে এমন মিল খুব একটা হয়না বাস্তবে! আর হয়না বলেই পরিবার থেকে নানা সমস্যার সুত্রপাত হয়ে তা গড়ায় চুড়ান্ত ক্ষতি পর্যন্তই। এর চেয়েও বেশি আশংকার বিষয় হলো এই সমস্যা ছড়াচ্ছে প্রকট আকারে ‘সামাজিক ব্যাধি হয়েই।

সঙ্গত কারনে শিরোনামেই কিছুটা কৌতুহল রেখেই শুরু করেছি আমরা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এমন সমস্যার কারন ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যাতেই জানা গেছে বিত্তশালী নারীদের সবকিছু থেকেও নিদারুন হতাশায় ভোগার সুনির্দিস্ট কিছু কারন।

তর্কের খাতিরে অনেকেই হয়তো আত্মপক্ষ সমর্থনের তাগিদে ব্যাপারটা উড়িয়েই দিতে চাইবেন! কিন্তু

‘বর্তমানে গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীরা প্রচুর উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাচ্ছেন।সাধারণত স্থূল নারীরা অল্প কাজেই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন বলে শারীরিক কাজে তারা কম সময় দেন। এতে তাদের এক প্রকার আলসেমি পেয়ে বসে। তাদের অনেকেই অতিরিক্ত ওজনের জন্য হীনমন্যতায় ভোগেন। অনেকে মানসিক চাপের শিকার হন।’

নারীদের এমন হীনমন্যতায় ভোগার সবচেয়ে বেশি আশংকার কারন হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নারীদের ভেতরে জন্মাতে থাকা ‘উচ্চাকাংখা’ আর অপসংস্কৃতি ছোবল । মুলত এই দুই কারনেই সবচেয়ে বেশি হীনমন্যতায় ভোগেন নারীরা।

কর্মব্যস্ত জীবনে মায়েরা এখন সময়ের অভাবে সন্তানের স্কুলের টিফিন তৈরির সুযোগ পান না। আর টিফিনের জন্য তারা রেস্টুরেন্ট থেকে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার কিনছেন। এ ছাড়া সন্তানের স্কুল ছুটির অপেক্ষায় বাইরে থেকে অন্য অভিভাবকদের সঙ্গেও এই মায়েরা অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু তারা যে হারে উচ্চ ক্যালোরির খাবার খাচ্ছেন সে অনুপাতে শারীরিক পরিশ্রম করছেন না। আর এই খাবারগুলোর প্রভাবে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে তারা স্থূল হয়ে পড়ছেন। শারীরিক সুস্থতার জন্য তাদের কম ক্যালোরির খাবার খেতে হবে।

সুখী হতে চাইলে ভোরে ঘুম থেকে উঠুন!

কেস স্টাডি – ১

মমতাজ বেগম একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ীর স্ত্রী, পেশায় গৃহিনী । ঘরের কাজের জন্য তিনি পুরোপুরি গৃহকর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। গৃহস্থালি কাজের জন্য তার সার্বক্ষণিক দুজন গৃহকর্মী রয়েছে। এর বাইরে আরও একজন গৃহকর্মী প্রতিদিন ঘর পরিষ্কারের কাজ করে। ফলে, তাকে ঘরের কাজ করতে হয় না। মাঝে-মধ্যে গৃহকর্মীদের শুধু কাজের নির্দেশনা দেন। এই গৃহিণীর বেশির ভাগ সময়ই কাটে ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি সিরিয়াল দেখে।

পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই পঁয়ত্রিশোর্ধ নারী তিন সন্তানের জননী।বারো বছর আগে যখন তার বিয়ে হয় তখন ওজন ছিল ৪৫ কেজি। বর্তমানে শরিফুন্নাহারের ওজন ৮৫ কেজি। নিজের প্রসঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি জানালেন , অতিরিক্ত স্থূলতার কারণেই অনেকটা বিব্রত বোধ করেন এখন তিনি। আর এই কারনেই ঘরের বাইরে খুব একটা বের হননা । কারণ দুটো। প্রথমত অস্বস্তি। দ্বিতীয়ত বাইরে গিয়ে অল্প চলাফেরাতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

কেস স্টাডি ২

উত্তরায় ৭ নং সেক্টরে থাকেন রুবাবা ইসলাম । স্বামী মইনুল ইসলাম একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। গৃহকর্তা রোজ সকাল ৮ টায় অফিসে যেতে ঘুম থেকে উঠলেও রুবাবা একটু দেরি করেই উঠেন ঘুম থেকে।

গৃহকর্মীরা বাচ্চাদের নাশতা করিয়ে দেয়, এরপর ড্রাইভারই তাদের স্কুলে দিয়ে আসে। তিনি দুপুরে হিন্দি স্টার প্লাস সিরিয়াল দেখে ঘুমিয়ে পরেন বিকেলে কখনো মন চাইলে ছাদে ঘুরে বেড়ান, না হলে স্টার মুভি দেখে কখনও যে তার বিকেল গরিয়ে সন্ধা নেমে আসে সময়ের বেড়াজালে, মাঝে মাঝে নিজেকে যেন বন্ধী মনে হয় নিজেরই বাড়িতে ।

স্বামী-সন্তান নিয়ে মাঝে মধ্যে লংড্রাইভে বাইরে ঘুরতে যান তার আগে শপিংয়ের জন্য বের হলেও এখন অনলাইন শপিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পরেছেন । বাসায় ব্যায়ামের জন্য তার থ্রেডমিল থাকলেও তিনি তা খুব বেশি ব্যবহার করেন না।

চিকিৎসকরা তাকে প্রতিদিন দুবেলা হাঁটতে এবং পরিমিত আহার করতে বলেছেন। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা হয় না। সন্তানদের আবদার মেটাতে প্রায়ই বাইরে ফাস্ট ফুড অর্ডার করেন এবং তিনি নিজেও ফাস্ট ফুড খেতে পছন্দ করেন।

ফলে দিন দিন রুবাবা ইসলাম এর ওজন বেড়েই চলছে অতিরিক্ত ওজনের কারনে মাত্র ত্রিশ বছর বয়েসে মধ্য বয়সী নারীর মত মনে হয় নিজেকে আয়নাতে একারনে সময়ে অসময়ে তিনি খুব বেশি হীনমন্যতায় ভোগেন ।

কেস স্টাডি – ৩

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সামিরা রহমান তার সন্তান আদৃতার আবদার মেটাতে প্রতি শুক্রবার তাকে রাজধানীর একটি নামি পিজ্জার দোকানে নিয়ে যান। তিনি বলেন, আমার সন্তান পিজ্জা খেতে পছন্দ করে। বাসায় প্রায়ই আমরা পিজ্জার অর্ডার করি।

পিজ্জা জাতীয় ফাস্ট ফুড কিনে না দিলে সামিরা ভাত খেতে চায় না। আর তার সঙ্গে আমারও পিজ্জা খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের মা ও মেয়ে দুজনেরই ওজন বেড়েছে।

গবেষণায় জানা যায়, স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন বাংলাদেশি বিবাহিত নারীদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্থূলতার কারণে মহিলাদের ডায়াবেটিস এবং নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

ঢাকার আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় জানা যায়, শহর ও গ্রাম উভয় এলাকার ধনী পরিবারগুলোর নারীদের স্থূলকায় হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শহরে বসবাসরত নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম করেন এমন নারীদের চেয়ে পূর্ণমাত্রায় কর্মজীবী নয় এমন নারীরা দেড়গুণ বেশি অধিক ওজন এবং স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাসও করতে হবে। চিকিৎসকরা জানান, ফাস্ট ফুডের প্রভাবে অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক স্থূলতার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনিরোগ, হাইপার টেনশন, স্ট্রোক এবং কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।

পুষ্টিবিদরা জানান, পিজ্জা, পাস্তা ও বার্গারের মতো ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়জাত খাবার নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারে উচ্চ মাত্রার চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট), উচ্চমাত্রার ক্যালরি, চিনি ও লবণ থাকে।

কম পরিশ্রম ও অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান, শহুরে নারীদের এক বড় অংশ সুখের অসুখে ভুগছেন।

কায়িক পরিশ্রমবিমুখ আয়েশি জীবনযাপন তাদের শরীরে নানা ধরনের অসুখের বিস্তার ঘটাচ্ছে। পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও মেডিটেশন এবং কর্মময় জীবনযাপনই তাদের ৭০ ভাগ রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে।

No comments:

Post a Comment