অসহনীয় অনবরত হাঁচি থেকে মুক্তি পেতে

 

হাঁচি যে কোন সময় যে কোন মানুষের আসতে পারে। তবে হাঁচি আসা দোষের কিছু নয়।খাওয়ার সময়, ক্লাসের ফাঁকে, অফিসে জরুরি মিটিংয়ের মাঝে কিংবা ঘুমের মধ্যে হাঁচি একটা চরম অস্বস্তিকর, বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে। 

আর করোনাভাইরাসের এই সময় হাঁচি দেয়া মানেই চরম আতঙ্ক, আশপাশের সবার নজরে পড়া।

কেউ যখন ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয় তখন নাক দিয়ে পানি ঝরা, নাকের ভেতরে যন্ত্রণা অনুভব করা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং বারবার হাঁচি আসার সমস্যায় ভোগেন। হাঁচি ঠাণ্ডার সাথে সম্পর্কিত একটি সাধারণ সমস্যা। তবে অতিরিক্ত হাঁচি দেয়া অসুস্থতার লক্ষণ। কী কী কাজ করলে অতিরিক্ত হাঁচি থেকে মুক্তি পাবেন, জানেন?

এমন সময়ে চট করে হাঁচি দূর করতে কী করবেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক হাঁচি থেকে মুক্তির  ১০টি অব্যর্থ উপায়-

১. এক চামচ মাখন বা চিনি খেতে পারেন। সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।

২. মুখের ওপরের অংশে ভালও করে মালিশ (ম্যাসাজ) করুন। প্রয়োজনে গলার পেছনের অংশে হালকা মালিশ করুন। এতেও হাঁচি কমবে।

৩.বেশি করে পানি খান। বিশেষ করে ঠাণ্ডা পানি খেলে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।

৪. যখন নাক দিয়ে নিশ্বাস নিবেন তখন নাকে হালকা করে চাপ দিন। এটি হাঁচির সমস্যা কমাতে সহায়ক।

৫. হাঁচি বন্ধে সহায়ক আরেকটি উপায় হলো দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ থাকুন। দেখবেন হাঁচি নিমেষেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

৬. হাঁচি বন্ধ করতে লেবুর রসের সঙ্গে আদা কুচিও খেতে পারেন। এতে অল্প সময়ের মধ্যেই উপকার পাবেন।

৭. যদি হঠাৎ করে হাঁচি ওঠে, তাহলে লম্বা শ্বাস নিয়ে ভেতরে অনেকক্ষণ রাখুন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নাক বন্ধ রাখুন। সমস্যা মিটে যাবে।

৮. কাগজের ব্যাগের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে নিশ্বাস নিন। অল্প সময়ের মধ্যেই উপকার পাবেন।

৯. লম্বা নিঃশ্বাস নিন। হাঁটুকে বুকের কাছাকাছি এনে জড়িয়ে ধরুন এবং কয়েক মিনিট এভাবেই থাকুন। এতে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।

১০. হাঁচি বন্ধ করার জন্য জিহ্বাতে লেবুর একটি অংশ রাখুন এবং মিষ্টি মনে করে সেটি চুষুন। এটি হাঁচি বন্ধ করতে বেশ কার্যকর।

ভিটামিন সি : নিয়মিত সাইট্রাস ফল খাওয়া ভালো। লেবু, কমলা, জাম্বুরা ও আঙ্গুর ফল ঘন ঘন হাঁচির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। হারবাল চায়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।


পিপারমেন্ট অয়েল : পিপারমেন্ট অয়েলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শুধু হাঁচিই প্রতিরোধ করে না, নাকের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে; ফুটন্ত পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা পিপারমেন্ট অয়েল মিশিয়ে নিয়ে। এরপর মাথা একটি বড় তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ভাঁপ নিতে হবে। এর ফলে নাক পরিষ্কার হবে এবং সহজে শ্বাস নিতে পারবেন।


বিছুটি গাছ : অনবরত হাঁচি দেয়ার সমস্যাটির সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিছুটি গাছ। যেকোনো ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া এবং অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট হাঁচি থেকে মুক্তি দিতে পারে বিছুটি পাতা। ফুটন্ত পানিতে বিছুটি পাতা দিয়ে চা তৈরি করে দিনে দুই-তিনবার এই চা পান করলে উপকার হবে।

দস্তা: বিরামহীন হাঁচি হলে দস্তা মানে জিঙ্ক আপনার পরম বন্ধু। প্রচুর পরিমাণে দস্তা আছে এমন খাবার কিংবা ‘সাপ্লিমেন্ট’ যে কোনোটাই বেছে নিতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করায় দস্তা অতুলনীয়। এর প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে আছে বাদাম, শিম, মটর ও শুঁটি-জাতীয় খাবারে।

কালো এলাচ: সবার রান্নাঘরেই এলাচ আছে, যা হাঁচি বন্ধ করতে পারে। এলাচের কড়া গন্ধ এবং এতে থাকা ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ ‘মিউকাস’য়ের প্রবাহ রোধ করে এবং অস্বস্তি সৃষ্টিকারী উপাদান বের করে আনে। অ্যালার্জিজনীত হাঁচিতে এটি বিশেষ কার্যকর। খেতে হবে চিবিয়ে।

আমলকী: পুষ্টিকর একটি ফল তা সবারই জানা। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, এতে থাকা শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ নাকের রাস্তা পরিষ্কার করে, ফলে হাঁচি থেমে যায়। খেতে পারেন সরাসরি কিংবা শরবত বানিয়ে। দিনে সর্বোচ্চ তিনবার আমলকীর শরবতে পান করা যায়।

গোলমরিচ : অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় গোলমরিচ বিভিন্ন প্রকারের শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা মোকাবেলায় এবং হাঁচি নিরাময়েও সাহায্য করে। কুসুুম গরম পানিতে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার পান করুন। গারগলও করা যায়।

আদা ও তুলসি: এই দুটোর মিশ্রণ সর্দি-জ্বর এবং অ্যালার্জি থেকে আরাম দেওয়ার একটি শক্তিশালী উপায়। এজন্য তিন-চারটি তুলসি পাতা ও ছোট এক টুকরা আদা পানিতে ফুটাতে হবে এবং সেই পানি পান করতে হবে। সরাসরি আদার বদলে আদার গুঁড়াও ব্যবহার করা যেতে পারে।

রসুন: এর গন্ধটা সবার কাছে সহনশীল না হলেও রান্নায় স্বাদ আনতে এই মসলা অনন্য, সেই সঙ্গে তাড়ায় অ্যালার্জিও। এতে থাকে এক বিশেষ সক্রিয় উপাদান ‘অ্যালিসিন’, যা বন্ধ নাক খুলে দিতে অত্যন্ত কার্যকর, পাশাপাশি বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। কাঁচা-আদা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন কিংবা সামান্য ঘিয়ে ভেজে নিতে পারেন।

তবে মনে রাখতে হবে

শুধু ঘরোয়া টোটকার উপর ভরসা করে থাকা সবসময় ঠিক নয়। তাই অবস্থা বেগতিক দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে অ্যালর্জিজনীত কারণে হাঁচি হলে চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে হবে অ্যালার্জির কারণ।


বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ 

 রোগীকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে যেন ঠান্ডা বাতাস না লাগে। * হাঁচি এবং নাকের পানি বন্ধ করার জন্য রোগীকে ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন, ট্যাব আকারে যেগুলো দেওয়া হয় তাহলো : ট্যাব, পিরিটন, বা ট্যাব, এনটিসটা বা ট্যাব, ডিস্টামিন বা ট্যাব, হিস্টালেক্স বা ট্যাব হিস্টাসিন বা ট্যাব. হিস্টাল ইত্যাদি। এ ওষুধগুলো যেসব রোগী ট্যাব খেতে পারে না তাদের জন্য সিরাপও পাওয়া যায়। এই সিরাপ প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ করে তিনবার খাবার খাওয়ার পর তিন/পাঁচ দিন চলবে। 

অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন, 
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা,
 মালিবাগ, ঢাকা।

অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বিষেশজ্ঞ  পরামর্শ 

এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি?
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমন্বিতভাবে এ রোগের চিকিৎসা হলো :
এলারজেন পরিহার : যখন অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওষুধ প্রয়োগ : ওষুধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে অ্যালার্জির উপশম অনেকটা পাওয়া যায়।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যালার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস/অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে ও পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস/অ্যাজমা রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অবিহিত করেন । এটাই অ্যালার্জিক রাইনাইটিস/অ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জি জনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। তাই সময়মতো অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেওয়া উচিত।

 অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা বিষেশজ্ঞ
দি এলার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার
৫৭/১৫ পান্থপথ, ঢাকা
ফোন : ০১৭২১৮৬৮৬০৬, চট্টগ্রাম-০১৮৪২৭০৮৯৪৫, ফরিদপুর-০১৭১১৪৪৫৮০৫, যশোর-০১৭১১৮৪১৫৭২, ঝিনাইদহ- ০১৭১১৯৬৫৪৫৪।




No comments:

Post a Comment