ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া | যে দোয়া পড়লে উহুদ পাহাড় সমান ঋণ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ

বিভিন্ন সময় আমরা অনেকেই ঋণগ্রস্ত হই। এ ঋণ প্রকৃতপক্ষে কারো জীবনের ক্ষেত্রেই সুখের খবর নয়। আর তাই জীবনে সব সময়ই আমাদের উচিত ঋণ থেকে মুক্ত থাকা। ঋণ থেকে মুক্তিলাভের জন্য হাদিস শরিফে  বিশেষ ও কার্যকরি কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে।

ঋণ যথারীতি পরিশোধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ প্রদান করে ঋণদাতা গ্রহীতাকে উপকার ও অনুগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং ঋণগ্রহীতার ওপর এক অবধারিত দায়িত্ব। ঋণগ্রহীতার ওপর এটি ঋণদাতার অধিকার। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করার পূর্বে মারা যায়, তাহলে কাফন-দাফনের পর প্রথমেই তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত কিছু থাকে, তাহলেই কেবল তার ওয়ারিশদের মাঝে তা বণ্টন করা হবে এবং তাতে তার অসিয়ত কার্যকর হবে।


ঋণ পরিশোধের বিষয়টি একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি হাদিস শরিফে এর ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রকারান্তরে যথারীতি ঋণ পরিশোধের প্রতি উৎসাহিতও করা হয়েছে।

সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করে দেওয়ার নিয়তে কারও নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দেন।’ -সহিহ বোখারি: ২৩৮৭ 

আরো খবর


ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করে দেওয়া কেবল পাওনা আদায় নয়, বরং এটা ওয়াদা রক্ষা করার অন্তর্ভুক্ত। সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায় এজন্যে হাদিসে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইমাম বোখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, হজরত আবু যর (রা.) বলেছেন, আমি একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
একপর্যায়ে উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেন, ‘আমি চাই না- উহুদ পাহাড় আমার জন্যে স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়া হলেও এর একটি দিনার আমার নিকট তিনদিনের বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্যে রেখে দিই সেটা ভিন্ন। -সহিহ বোখারি: ২৩৮৮


যারা সচ্ছল অবস্থায় শান্তিতে আছেন, তারা যেন কঠিন পেরেশানি, বড় বিপদ, বড় ঋণের বোঝা, অলসতা, অক্ষমতা ও কাপুরুষতার স্বীকার না হন, সেই জন্য নিয়মিত এই দুয়া পড়া উচিত। আর যারা এগুলোর শিকার হয়েছেন তারাও নিয়মিত এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবেন—

কখনো কখনো ঋণগ্রহীতাকে অসম্মানজনক আচরণের শিকার হতে হয়। তাই ঋণগ্রহীতা সবসময় চান দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে।

দ্রুত ঋণমুক্ত হতে সক্ষম হওয়ার জন্য রাসুল (সা.) কিছু আমল ও দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঋণ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে অত্যধিক আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

একবার ঋণ থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনারত অবস্থায় এক ব্যক্তি বলেন, 

‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঋণ থেকে খুব বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন!’ নবী কারিম (সা.) বলেন- ‘মানুষ ঋণী হলে, কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে, রক্ষা করে না।’ (বোখারি, হাদিস নং : ২৩৯৭)


ঋণগ্রস্ত থাকার সময় রাসুল (সা.) সব সময় বেশি বেশি এই দোয়া পড়তেন-

 ‘আল্লাহুম্মা! ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মা’ছামি, ওয়াল মাদরামি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (বোখারি, হাদিস নং ৬০০৭)


পর্বত সমপরিমাণ ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া


একবার হজরত আলী রা.-এর কাছে এক ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী রা. তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।

এরপর আলী রা. ওই ব্যক্তিকে উক্ত দোয়া পড়তে বলেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩, আহমদ ১৩২১)

(2) «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ».

(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল)।

১৩৭-(২) “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”[2]

ফজিলত : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)


[1] তিরমিযী ৫/৫৬০, নং ৩৫৬৩। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮০।

[2] বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩। তাছাড়া পূর্বে পৃষ্ঠায় ১২১ নং এ গত হয়েছে।


ঋণ মুক্তির এবং কোটিপতি হওয়ার শক্তিশালী আমল ! মিজানুর রহমান আজহারী। Mizanur Rahman Azhari ( Video )



যে দোয়া পড়লে পাহাড় সমান ঋণ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। - শাইখ আহমাদুল্লাহ ( Video )




রাসুল সা সালাতে ঋনমুক্তির জন্য দোয়া চাইতেন আর আপনি ঋন নিয়ে ব্যবসা করেন পুরো উল্টো by Abdur Razzaque   ( Video )














ফেসবুক নিয়ে মাতামাতি ছাড়ুন, খুশি থাকুন

যতই  আপনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক নিয়ে মাতামাতি করুন না কেন, আদতে ওই অভ্যাসটি ছেড়ে দিতে পারলেই আপনি ভালো থাকবেন, খুশি থাকবেন।  ডেনমার্কের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হ্যাপিনেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটঢে গবেষকরা অন্তত এমনটাই বলছেন।


আরো খবর


অর্ধেককে ফেসবুক করতে দেওয়া হয়, অর্ধেককে ফেসবুক করা থেকে বিরত রাখা হয়। 

এক সপ্তাহ পর দেখা যায়, যারা ফেসবুক করছিলেন না, তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবকই খুশি হয়েছেন। 

যারা ফেসবুক নিয়মিত করছিলেন, তারা আরও নিজেদের আরও একাকী ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বোধ করছিলেন।েষকরা বলছেন, হাতে বাড়তি সময় থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলুন।

 গবেষকদের বক্তব্য, ” আমাদের কী চাই, তার উপর মনোযোগ দেওয়ার বদলে ফেসবুক আমাদের অন্যদের কী রয়েছে-তার উপর গুরুত্ব দিতে শেখায়।” 

সংস্থার সিইও মাইক উইকিং বলছেন, “কয়েকদিন ফেসবুক করার কথা ভুলে নিজের কাজে মন দিয়ে দেখুন, আরও দ্রুত ও খুশি খুশি মনে আপনি আপনার কাজ শেষ করতে পারবেন।”


আরো পড়ুন :

প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো নিজের সাথেই রাখুন 

আপনি যেখানেই যান না কেন, প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো নিজের সাথেই রাখুন। যেকোনো মুহূর্তে প্রয়োজন পড়ে যেতে পারে। মাঝে মাঝে এমন হতে পারে যে, আপনার হয়তো  মাথা ব্যথা, হঠাৎ অ্যাসিডিটির সমস্যা হচ্ছে, একটা ওষুধ আপনার খুব প্রয়োজন; আপনার আশে পাশে কোথাও পাচ্ছেন না অথচ নিজের সাথেই থাকলে খুব উপকার হত, সেক্ষেত্রে ওষুধটা নিজের সাথেই থাকলে খুব উপকার হয়। এই ধরণের ওষুধকে ‘ওভার দ্যা কাউন্টার’ ড্রাগ বা OTC ড্রাগ বলে। কারণ এইসব ওষুধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই আপনি ফার্মেসি থেকে কিনতে পারবেন।

কিছু সমস্যা এবং সে সময় কি ওষুধ খাবেন তা জেনে নিন। ওষুধের জন্য সাথে ছোট একটা ব্যাগ বা নিজের হাত ব্যাগের সাইড পকেটেই ওষুধগুলো নিয়ে রাখতে পারেন।

মাথা বা অন্য কোথাও ব্যথা,জ্বরঃ  

 ব্যথার ক্ষেত্রে আপনি স্বল্প মাত্রার পেইন কিলার খেতে পারেন। যেমন অ্যাস্পিরিন, প্যারাসিটামল, অ্যাসিটামিনোফেন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন। আর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ই যথেষ্ট। 

তবে পেইন কিলারের প্রভাবে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে, এজন্য পেইনকিলার অবশ্যই ভরা পেটে খেতে হবে, আরও ভাল হয়  একটা অ্যাসিডিটির ট্যাবলেটও খেয়ে নিলে, সেক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির ট্যাবলেট (যেমন রেনিটিডিন বা ওমেপ্রাজোল) খাবার আগেই খেয়ে নিতে হবে। 

পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে যে বড়দের ওষুধের ডোজ বা মাত্রা আর শিশুদের ওষুধের মাত্রার মধ্যে বিস্তর ফারাক। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো সঠিক মাত্রার ওষুধ শিশুকে দিতে হবে।

 সাবধানতাঃ 

অতিরিক্ত প্যারাসিটামল ও ব্যথার ওষুধ লিভার বা যকৃত এবং কিডনির ক্ষতির কারণ। এগুলি দীর্ঘদিন ধরে খেলে একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খুব বেশী প্রয়োজন না পড়লে, এবং বেশি মাত্রার প্যারাসিটামল বা ব্যথার ওষুধ অকারণে খাওয়া উচিত না।

অ্যাসিডিটির সমস্যায়ঃ 

অ্যাসিডিটির সমস্যার কারণে হঠাৎ বুক জ্বালা-পোড়া করলে,সেটা কমানোর জন্য অ্যান্টাসিড বা মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া দুতিন চামচ খেয়ে নিতে পারেন। আর আরও অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে একটা রেনিটিডিন বা ওমেপ্রাজোল খেয়ে নিলে আবার কষ্ট পাবেন না, পাশাপাশি ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত কাবার পরিহার করতে হবে।  

কেটে গেলেঃ

র্ঘটনা বসত হঠাৎ হাতে-পায়ে কেটে- ছিলে যেতে পারে । সেক্ষেত্রে ব্যাগে ২-৩ টি ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ এবং অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম রাখতে পারেন। যেমন ব্যাসিট্রাসিন ও নেওমাইসিন ক্রিম যা বাজারে নেবানল, নেবাসন, নিওসিন, নিও বি, নেব্রাসিন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।

পুড়ে গেলেঃ 

কোথাও পুড়ে গেলে বার্ন ক্রিম লাগাতে পারেন। যেমন সিলভার ক্রিম (বাজারে বার্না, সিলক্রিম, নিওজিন ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়।)

কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে সেখানে দ্রুত জীবাণুর সংক্রমণ হয়। তাই তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিলে জীবাণুর সংক্রমণ এবং ফলসরূপ যে পুঁজ বা ইনফেকশন হয় তা প্রতিরোধ ওরা যায়।

সাবধানতাঃ বেশি কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পা মচকে যাওয়ার ক্ষেত্রেঃ 

হাঁটতে গেলে, চলাফেলা করতে গেলে হঠাৎ বেখেয়ালে পা মচকে যায়। তখন হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে ব্যাগে ক্লোফেনাক বা ডাইক্লোফেনাক জেল  ডাইক্লোফেনাক, কারিসোপ্রোডল বা ব্যাক্লোফেন রাখুন। এই ব্যথানাশক জেল গুলি আক্রান্ত জায়গায় দিনে দুতিন বার মালিশ করলে ব্যথা তাড়াতাড়ি কমে আসে। ।

অ্যালার্জির সমস্যায়ঃ

 কারো কারো ডাস্ট অ্যালার্জি থাকে। হালকা ধুলো-বালিতে হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। ডাস্ট অ্যালার্জি ছাড়াও অনেকের খাবারেও অ্যালার্জি থাকে। হঠাৎ করে হাঁচি-কাশির সাথে চোখ দিয়ে হয়তো পানিও পড়া শুরু হলো। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে পারেন। সেট্রিজিন, লেভো-সেট্রিজ এভিল, হিস্টাসিন বা ফেনারগন জাতীয় ওষুধ এমন সমস্যায় ভালো কাজ দেয়।  

প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো হাতের কাছেই রাখুন। ঘরের বাইরে থাকলে হঠাৎ নিজের কোনো প্রয়োজনে বা অন্যের প্রয়োজনে ইমারজেন্সি মুহূর্তে এই স্বভাবটি চমৎকারভাবে উপকারে লেগে যাবে।




CodePen - Bootstrap Facebook Share Button

ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া ( সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ )

 


সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ :


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। [বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।]



রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’। [105]

[105] . বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।

হাদিসের আলোকে প্রশান্তি লাভের উপায়


            SS Share     ....

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, তিনটি বিষয় মানুষকে মুক্তি দেয়। এক. আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা নির্জনে ও লোকসমাগমে (বা প্রকাশ্যে ও গোপনে)। দুই. কেউ সন্তুষ্ট বা রেগে গেলেও সামনে সত্য কথা বলে দেয়া। তিন. দারিদ্রতা ও স্বচ্ছলতা উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থায় খরচ করা। আর তিনটি বিষয় মানুষকে ধ্বংস করে। 

এক. নফসের খায়েশাতের অনুসরণ করা।

 দুই. কৃপণতাকে প্রশ্রয় দিয়ে জীবন যাপন করা।

তিন.  আত্মগরিমা ও অহংকার রোগে ভোগা। 

এই তৃতীয়টি এগুলোর মাঝে সবচেয়ে ক্ষতিকর। (বাইহাকি শুয়াবুল ইমান) মুসনাদে আহমদ ও বাইহাকির অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘চারটি গুণ হাসিল করতে পারলে সারা দুনিয়া ছুটে গেলেও কোন সমস্যা নেই। 

এক. আমানতের হেফাজত করা। 

দুই. সত্য কথা বলা। 

তিনি. সুন্দর চরিত্র। 

চার. জীবিকা অর্জনে সতর্কতা।’ 

অনেকগুলো গুণের কথা বলা হলেও সবের মূলে রয়েছে একটি। তা হচ্ছে তাকওয়া।

তাকওয়ার পরিচয়
তাকওয়া আরবি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ভয় করা, বেঁচে থাকা ইত্যাদি। তাকওয়ার পরিচয় বিভিন্নভাবে দেয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে উত্তম পরিচয় দিয়েছেন হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) যখন হজরত উমর (রা.) তাকে তাকওয়ার পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। হজরত উমর (রা.) তাকে প্রশ্ন করেছিলেন তাকওয়া কী? হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনি কখনো এমন রাস্তা দিয়ে গিয়েছেন যা কাটায় পরিপূর্ণ? হজরত উমর (রা.) বলেন, কয়েক বার গিয়েছি। হজরত উবাই ইবনে কাব বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আপনি কেমন করতেন? হজরত উমর (রা.) বলেন, কাপড় গুটিয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে যেতাম। তখন হজরত উবাই ইবনে কাব বলেন, ব্যস, এর নামই হচ্ছে তাকওয়া। এই দুনিয়া হচ্ছে কন্টাকাকীর্ণ পথ। 

গুনাহের কাটায় এটা ভরপুর। তাই এখানে এরকমভাবে চলা যেন গুনাহের কাটা দ্বারা ক্ষতবিক্ষত না হয়। আর এর নামই হচ্ছে তাকওয়া। দুনিয়াতে এটাই সবচেয়ে দামি বস্তু।’ হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, মানুষ জাগতিক ভোগবিলাসিতা ও সম্পদের পেছনে পড়ে থাকে। অথচ দুনিয়ার বুকে সবচেয় দামি বস্তু তাকওয়া। (মাআরেফুল কোরআন, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪২) 

তাকওয়ার স্তর
যে ব্যক্তি তাকওয়া অর্জন করে তাকে বলা হয় মুত্তাকী। কারণ, মুত্তাকী আখেরাতের ক্ষতিকর, কষ্টদায়ক বিষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে। মুত্তাকি লোকদের তিনটি স্তর রয়েছে-

এক. শুধু কুফুর ও শিরক হতে নিজেকে রক্ষা করে চলা। এটা তাকওয়ার সর্বনিম্ন পর্যায়।

দুই. কুফুর ও শিরক থেকে বেঁচে থাকার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কবিরা গুনাহ থেকেও নিজেকে রক্ষা করা এটা তাকওয়ার দ্বিতীয় স্তর।

তিন. কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের মুত্তাকি হচ্ছেন ওই ব্যক্তি যে শুধু কুফুর, শিরক ও অন্যান্য গুনাহ থেকেই নিজেকে পবিত্র রাখে না বরং শরীয়ত যেগুলোকে অনর্থক কাজ সাব্যস্ত করেছে সেগুলো থেকেও নিজেকে রক্ষা করে চলে। প্রকৃত অর্থে তারাই মুত্তাকি। আল কোরআনে মুমেনকে এই পর্যায়ের তাকওয়া হাসিল করে দুনিয়া থেকে যেতে বলেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যথাযথ ভয়। আর তোমরা দুনিয়া থেকে যেয়ো না খাঁটি মুমিন হওয়া ছাড়া। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-১০২) 

হজরত শাহর ইবনে হাওশাব (রা.) বলেন, ‘মুত্তাকি ওই ব্যক্তি যে হারাম ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই সব কাজও ছেড়ে দেয়, যাতে শরীয়তের দৃষ্টিতে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই (কিন্তু বৈধ বা অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে সংশয় থাকে)। (তাফসিরে মাজহারি, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৮)

এই প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, হজরত নুমান ইবনে ইবনে বশীর (রা.) এর সূত্রে নবী করিম (সা.) বলেন, হালাল ও হারাম সুস্পষ্ট। এ’দুয়ের মাঝে অনেক বিষয় রয়েছে যা সংশয়পূর্ণ এবং অধিকাংশ মানুষের এব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

অতএব যে ব্যক্তি সংশয়পূর্ণ এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে সে নিজের দ্বীনদারিকে পবিত্র রাখতে পারবে। যে সংশয়পূর্ণ বিষয়গুলো করবে সে হারামে লিপ্ত হবে। যেমন কোনো রাখাল নিষিদ্ধ ভূমির আশাপাশে ছাগল চড়ালে আশঙ্কা থাকে যে, তার ছাগল অচিরেই ওই নিষিদ্ধ ভূমিতে ঢুকে যাবে। শোন! শোন! জমীনের বুকে আল্লাহর নিষিদ্ধ ভূমি হচ্ছে তার হারাম বিধিবিধানগুলো।’ তারপর রাসুল (সা.) বলেন, প্রত্যেকের দেহে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে ওই অঙ্গটি ঠিক হয়ে গেলে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আর এর নাম হচ্ছে কলব।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২০৫১)

তবরানি শরীফের এক হাদিসে এসেছে হালাল, হারাম সুস্পষ্ট। আর যা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তুমি তা ছেড়ে ওই বস্তু গ্রহণ করো যেখানে কোন সন্দেহ নেই।’

তাকওয়ার উপকারিতা
তাকওয়া এমন গুণ যার দ্বারা মানুষের ভেতরে প্রশান্তি লাভ হয়। আল্লাহ তায়ালার বন্ধুত্ব হাসিল হয়। আল কোরআনে এসেছে, আল্লাহ তায়ালার বন্ধু কেবল মুত্তাকী লোকেরাই।’ রিজিকের সংকীর্ণতা দূর হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর ভয় অর্জন করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিবেন এবং এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।’ দুনিয়ার জীবনে মানুষের ভালোবাসা লাভ হয়।

তাকওয়া অর্জনের উপায়
এক. আল্লাহওয়ালা বান্দাদের সংশ্রব লাভ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন করো এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হও।’ (সূরা তাওবা-১১৯)

দুই. সততা ও সত্য কথা বলা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন করো এবং সত্য কথা বলো।’ (সূরা আহযাব-৭০) উল্লেখিত উভয় আয়াতে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে দুটি বিষয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত এগুলো হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের সহায়ক। আল্লাহ আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন।

বিশিষ্ট সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা সাত ধরনের ব্যক্তিকে তার আরশের ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত করবেন যেদিন ওই ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. ওই যুবক যে আল্লাহতায়ালার ইবাদতে বেড়ে ওঠে, ৩. এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং তার নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়, ৪. ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে, ৫. এমন দুই ব্যক্তি যারা একে অন্যকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভালোবাসে, ৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো প্রভাবশালী সুন্দরী নারী কুপ্রস্তাব দেয় আর সে উত্তরে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি, ৭. ওই ব্যক্তি যে নিজের দানকে এমনভাবে গোপন করে যে তার বাঁ হাত জানতে পারে না ডান হাত দ্বারা কী দান করল।

-সহিহ বোখারি, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা. ২৪৯৬, হাদিস নম্বর ৬৪২১


আলোচ্য হাদিসে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ সময়ে যখন মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করবে একটু ছায়ার সন্ধানে তখন উপরোক্ত বিশেষণে বিশেষিত ব্যক্তিবর্গ আল্লাহতায়ালার বিশেষ কৃপা লাভ করবেন এবং তার ছায়াতলে আশ্রয় পাবেন। এখানে আল্লাহর ছায়া দ্বারা কারো কারো মতে আল্লাহতায়ালার বিশেষ তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষাদানকে বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দিসের (হাদিস বিশারদ) মতে আরশের ছায়াকে বুঝানো হয়েছে যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হাদিস দ্বারা সমর্থিত। হাদিসে বর্ণিত সাত ব্যক্তির বর্ণনা নিম্নে সবিস্তারে উল্লেখ করা হলো—

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর মতে এখানে শাসক দ্বারা কোনো দেশ বা এলাকার নির্বাহী প্রধানকে বুঝানো হয়েছে। তবে মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত যে সব লোক ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তাদের ক্ষেত্রেও উক্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। ন্যায়পরায়ণতা বলতে প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালার বিধান অনুসরণ করাকে বুঝানো হয়েছে। ন্যায়ের বিপরীত হলো অত্যাচার, অনাচার। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আর যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে করবে। ’ -সূরা আন নিসা : ৫৮

২. যে যুবক আল্লাহতায়ালার ইবাদতের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে। এখানে যুবককে বিশেষিত করা হয়েছে এ কারণে যে, যৌবনকালে মানুষ প্রবৃত্তি দ্বারা বেশি তাড়িত হয়ে থাকে। তাই প্রবৃত্তিকে দমন করে আল্লাহভীতিকে প্রাধান্য দিয়ে যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে তার জন্য এই মহা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে। অর্থাৎ মসজিদের বাইরে অবস্থান করলেও মসজিদের সাথে মন লেগে থাকে এবং অপেক্ষায় থাকে আবার কখন মসজিদে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ এর দ্বার নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্বের কথা বলেছেন।

৪. এমন দুই ব্যক্তি যারা একে অন্যকে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভালোবাসে। উল্লেখ্য যে, এই ভালোবাসা বাহ্যিকভাবে হলে হবে না বরং তা প্রকৃতপক্ষেই ভালোবাসা হতে হবে। দু’জনে একত্রে থাকুক বা আলাদা থাকুক এই ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি হবে না। আমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে এমন ভালোবাসার বহু নজির রয়েছে। ৮ম হিজরিতে সংঘটিত মুতার যুদ্ধের সেই তিন যোদ্ধার কাহিনী তো এ বিষয়ে বেশ প্রসিদ্ধ। যারা পিপাসার্ত অবস্থায় হাতের নাগালে পানি পেয়েও অন্য ভাইয়ের জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেছেন। বস্তুত এটাই মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের মূর্তপ্রতীক। অন্য এক হাদিসে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করাকে ঈমানের অংশ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই ভালোবাসায় দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ থাকতে পারবে না।

৫. যে ব্যক্তি লৌকিকতা পরিহার করে নির্জনে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে। সেটা মুখে হোক বা অন্তরে হোক। সেই স্মরণে সাথে সাথে তার দু’নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়, সে থাকে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত। এছাড়া সকল মানুষ যখন নিদ্রায় মগ্ন থাকে তখন নির্জনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকাকে জান্নাত লাভের অন্যতম পাথেয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অন্য আরেক হাদিসে।

৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী, বংশীয় ও প্রভাবশালী নারী ব্যভিচারের দিকে আহবান করে তখন সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার ভয়ে ওই নারীর আহবানকে প্রত্যাখ্যান করে যদিও তাতে কোনো দুনিয়ার শাস্তির আশঙ্কা থাকে। আল্লাহর নবী হজরত ইউসুফ (আ.) মিসরের সম্রাট পত্নী জোলায়খার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জেলখানাকে উত্তম বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করেছেন যা পবিত্র কোরআনের সূরা ইউসুফে বর্ণনা করা হয়েছে।

৭. এমন ব্যক্তি যিনি তার দানকে এমনভাবে গোপন রাখেন যেন ডান হাত কী দান করল বাম হাত জানতে পারল না। এখানে বাহ্যিকভাবে সকল প্রকার দানকে বুঝানো হলেও আল্লামা নববী (রহ.) বলেছেন, ফরজ দান গোপনে করার চাইতে প্রকাশ্যে করাই উত্তম। ইবনে মালেক বলেন, এই গোপনীয়তা নফল দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, কারণ জাকাত প্রকাশ্যে দেওয়া উত্তম।

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদিসে কিয়ামত দিবসে আরশের নিচে ছায়া প্রাপ্য যে সাত শ্রেণির লোকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) গবেষণা করে আরো অনেক বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো আরশের নিচে ছায়াপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এবং এ বিষয়ে তিনি স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন। এতে বুঝা গেল যে, উপরোক্ত হাদিসের সাত সংখ্যাটি মুখ্য নয়।

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে নিম্ন বিষয়গুলো মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়-
ক. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সকল পর্যায়ে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করা। এর বিপরীতে অন্যায়, অনাচার, অত্যাচারের মতো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা। কারণ এগুলো জঘন্য অপরাধ এবং পরকালে এ জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

খ. ইবাদত জীবনের সকল স্তরে গুরুত্বপূর্ণ হলেও যৌবনকালের ইবাদতের মর্যাদা বেশি। কারণ এ সময়ে মানুষের কুরিপু এবং কুপ্রবৃত্তি দমন অন্য বয়সের তুলনায় কষ্টসাধ্য। তাই যৌবনকালে কষ্ট হলেও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা।

গ. মুমিনের অবস্থান যেখানেই হোক, যে কাজেই সে লিপ্ত থাকুক তার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে এবং মসজিদই হবে তার আত্মার ঠিকানা। এর ফলে মসজিদভিত্তিক সুষম সমাজ গড়ে উঠবে।

ঘ. মুমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা, বিদ্বেষ, হাদিয়া প্রদান, হাদিয়া গ্রহণ, সুসম্পর্ক বজায় রাখা, পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো ইত্যাদি সকল কাজ হবে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। এ সব বৈশিষ্ট্য ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ বিশেষ।

ঙ. আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য নির্জনতা সর্বোত্তম কৌশল এবং মুমিনের চোখের পানি আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রিয়।

চ. প্রতিকূল পরিবেশে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের সম্ভ্রম বজায় রাখা ইবাদত বিশেষ।

ছ. নফল দান-খয়রাত করার সময় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা ও আত্মপ্রচার থেকে নিজেকে দূরে রাখা মুমিন চরিত্রের ভূষণ।