কেন ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন?
ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠবা। সব সাফল্য তোমার পিছনে পিছনে ছুটবে।’ স্যারের এই কথা শতভাগ সত্য পেয়েছি। চলুন দেখা যাক, কী কী কারণে আপনি ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন।
প্রসঙ্গ
শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, শিক্ষাবিদ ও আমার শিক্ষাগুরু প্রয়াত ড. সদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী স্যারের কাছে জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য একটা উপদেশ চেয়েছিলাম। স্যার বলছিলেন, ‘আমি আমার মেয়ে নাজিয়াকে যে উপদেশ দিতাম, তোমাকেও সেই উপদেশ দিচ্ছি, বুঝেছ না কথা?
১. ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হলে রাতে আগে ঘুমাতে হয়। ফলে জীবনে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা আসে।
আরো খবর
- ➤ মুহূর্তেই খুশখুশে কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ➤ চাকরির ‘ভাইভা বোর্ডে’ সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞে’স করা ‘৭৭টি প্রশ্ন’
- ➤ বিবস্ত্র হয়ে ঘুমালে হতে পারে যেসব সমস্যা
২. আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মতে, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ছাত্ররা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ছাত্রদের থেকে ভালো ফল করে।
৩. অফিসে বা বাইরে কাজে যাওয়ার আগে ঘরের কাজ করার জন্য প্রচুর সময় পাওয়া যায়।
৪. গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ভোরে ওঠেন তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন, কাজে সময় কম লাগে ও স্বপ্ল সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং তাড়াতাড়ি লক্ষ্যে পৌঁছান।
৫. রাতে আগে শুয়ে পড়লে ঘুম ভালো হয়। ঘুম ভালো হলে শরীর ভালো থাকে ও অসুখ-বিসুখ কম হয়।
৬. সকালে নাশতা করার সময় পাওয়া যায়। অফিসে গিয়ে অফিসের সময় নষ্ট করে নাশতা করতে হয় না। যাঁরা সকালে সময় নিয়ে ভালোভাবে নাশতা করেন, তাঁদের পাকস্থলী ভালো থাকে।
৭. নীতিমানরা অফিসের সময় অফিসের কাজে ব্যয় করেন। কারণ তাঁরা এই মূল্যবান সময়ের জন্য পাওয়া পারিশ্রমিক শতভাগ হালাল করতে চান। তার জন্য তাঁরা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন।
৮. পৃথিবীর সব বড় সফল মানুষের ও বড় নির্বাহী কর্মকর্তার সাফল্যের মূল গোপন রহস্য হচ্ছে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা।
৯. সকালে ঘুম থেকে উঠলে তাড়াহুড়া করতে হয় না এবং কাজের চাপ কম থাকে। ফলে স্ট্রোক বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
১০. পৃথিবীতে প্রায় সব আশাবাদী, ইতিবাচক ও সুখী মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন।
১১. মনীষী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মতে, ভোরের মুখে সোনা রং থাকে।
১২. আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সকাল বেলার পাখি হতে চেয়েছিলেন, রাত্রের নয়।
১৩. অস্বস্তি, মেজাজ খারাপ, রাগান্বিত হওয়া, পেটের সমস্যা, বাতের সমস্যা, মাথা ভার ভার করা, শরীর মেজ মেজ করা ইত্যাদির সহজ সমাধান ভোরে ঘুম থেকে ওঠা।
১৪. ভোরের সৌন্দর্য দেখলে মনে প্রশান্তি আসে এবং ভোরের বাতাসে প্রাণ জুড়ায়।
|আরো খবর
১৫. ভোরে সূর্য ওঠার পরের মিষ্টি রোদে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
১৬. সকালে প্রকৃতি নীরব থাকে, তাই কোনো চিন্তা বা পরিকল্পনা সকালে করাই সর্বোত্তম।
১৭. বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মতে, রাতে আগে ঘুমালে ও ভোরে ঘুম থেকে উঠলে মানুষ স্বাস্থ্যবান, সম্পদশালী ও জ্ঞানী হয়।
১৮. পৃথিবীর সব ধর্মের সব ধার্মিক মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন।
১৯. ঘুম ভালো হওয়ার জন্য সকালে ঘুম থকে ওঠার বিকল্প নাই।
২০. সুস্বাস্থ্যের জন্য সকালে হাঁটা ও ব্যায়ামের বিকল্প আছে কি? তার জন্য দরকার সকালে ঘুম থেকে ওঠা।
তাই আসুন, আজ থেকে আমাদের সবার চেষ্টা আর শপথ হোক ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে নামাজের জন্য ঘুম থেকে ওঠা। কারণ:
১. নিশ্চয়ই ঘুম থেকে নামাজ উত্তম, আর
২. ফজরের নামাজ ছেড়ে দিলে চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
চলুন জেনে নেই ভোরে ঘুম থেকে উঠার আরও সুফলগুলো-কি কি
মানসিক সুস্থতা: সকালে ওঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি। যখন কেউ সকালে ওঠেন, তখন কাজের গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায়। ইতিবাচক বার্তা দিয়ে দিন শুরু হয়। সারাদিন এই ইতিবাচক মনোভাব চলতে থাকে। প্রাণচঞ্চলতা বৃদ্ধি পায় ও হাসিখুশি থাকা যায়।
একঘেয়েমি: দিনের কাজ শুরুর জন্য সকালের নাস্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকালে উঠে একটা স্বাস্থ্যকর নাস্তা করা অতি জরুরি কাজের মধ্যে একটি। কারণ সকালের স্বাস্থ্যকর নাস্তা আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিন যোগান দেয় এবং যেকোনো কাজে একঘেয়েমি দূর করতে সহায়তা করে।
ব্যায়াম: সকালে ঘুম থেকে ওঠার আরেকটি সুফল বয়ে আনবে ব্যায়াম। সেই সঙ্গে রাতের ঘুমও গভীর করবে ব্যায়াম। সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। এতে ঘুম ভালো হয়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও অভ্যাস হয়ে গেলে দেহঘড়ি ঘুমের নতুন সময় ও সকালে ওঠার বিষয়টি মানিয়ে নেবে। যারা সকালে উঠে ব্যায়াম করেন তারা সারাদিন ঝরঝরে থাকেন এবং রাতেও গভীর ঘুম উপভোগ করেন।
|আরো খবর
পড়াশুনা: ভোরে ঘুম থেকে উঠলে আপনি ফ্রেস মনে পড়াশুনায় সময় দিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক গবেষণায় দেখেছেন, যারা সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, তারা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করে।
আরও উৎপাদনশীল: সকালে ঘুম থেকে উঠলে আপনার কাজের গতি বেড়ে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন আরো উৎপাদনশীল। তাই দুপুরের লাঞ্চের সময় দেখবেন আপনি যথেষ্ট কাজ সেরে ফেলেছেন এবং তা দেখেই আপনার উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে যাবে। তাই ঘুম থেকে সকালে উঠুন।
বিশুদ্ধ বায়ু: সারাদিন মানুষের চলাফেরা ও কলকারখানা খুলা থাকে বলে দিনে বাতাসে প্রচুর রোগ-জীবানু থাকে। কিন্তু ভোরের বায়ু থাকে বিশুদ্ধ। ফলে আপনি নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় বিশুদ্ধ বায়ু শরীরের ভেতরে নিতে পারছেন।
সুখী জীবন: সকালে উঠলে জীবন সুখের হয়। জীবনে ইতিবাচক দিক বাড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ভোরে ঘুম ভাঙে, তারা বেশি সুখী হন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন