যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন যে আপনি থাইরয়েডের শিকার !!!


থাইরয়েড নামক রোগটির সঙ্গে আমরা বর্তমানে কমবেশি সকলেই পরিচিত। কীভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে থাইরয়েডের কোনও সমস্যা আদৌ আছে কি না?

সাধারণত দুই ধরণের থাইরয়েড দেখা যায়। হাইপোথাইরয়েড ও হাইপারথাইরয়েড। হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক দেখানো, ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা, ক্লান্তির মতো সমস্যা দেখা যায়। আর হাইপারথাইরয়েডে ওজন হঠাৎ করে কমে যায়। এক্ষেত্রে কোষ্টকাঠিন্য, গরম সহ্য করতে না পারা, অবসাদ, ঋতুস্রাব কম হওয়ার মতো লক্ষণ প্রকট হয়।


থাইরয়েড হল আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা মেটাবলিজম, হৃদযন্ত্রের কাজ, 
 তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, মস্তিষ্কের বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, অস্টিওপোরোসিস, কিডনি-লিভারের সমস্যা, ভুলে যাওয়ার মতো নানা শারীরিক জটিলতা দেখা যেতে পারে। তাই শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করুন।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মধ্যে ঘুম ভাব থাকে। কিন্তু থাইরয়েড থাকলে সকালে সারা শরীরে একটা আড়ষ্টতা থাকে। শরীর কিছুটা ভারীও লাগে। প্রায় সব সময়ই ক্লান্ত থাকে।


আরো পড়ুন : অসহনীয় অনবরত হাঁচি থেকে মুক্তি পেতে


অল্পদিনের মধ্যে শরীরে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ। এরকম হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। এমনকি, নখও খুব বেশি পরিমাণে ভঙ্গুর হয়ে যায়। প্রায়ই পেটখারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কিন্তু থাইরয়েডের লক্ষণ।

গলার সামনে দিকে মাঝখানে, যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে, সেখানে কোনও ধরনের ফোলাভাব থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


থাইরয়েডের ক্ষেত্রে মেয়েদের পিরিয়ডসের সমস্যা দেখা যায়। খুব বেশিদিন ধরে বেশি বেশি ঋতুস্বাব হওয়া বা ১-২ দিনের মধ্যে হঠাৎ করে ঋতুস্বাব বন্ধ হয়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ।

থাইরয়েডের ফলে তাপমাত্রার প্রতি সহনশীলতা কমে যায়। তাপমাত্রা সামান্য কমলেই বেশি ঠান্ডা লাগে আবার সামান্য বেড়ে গেলেই আসহ্য গরম লাগে এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়।

লক্ষণ

ক) সাধারণ লক্ষণগুলো
১) অবসাদগ্রস্ততা বা ঘুমঘুম ভাব;
২) ওজন বৃদ্ধি;
৩) ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা;
৪) গলার স্বরের কোমলতা কমে যাওয়া এবং অনেকটা ভারী বা কর্কশ শোনানো।
৫) গলগণ্ড নিয়ে প্রকাশ করতে পারে।

খ) হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা
    ১) হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা অনুভব করা অথবা হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
    ২) হৃদযন্ত্রের আবরণে অথবা ফুসফুসের আবরণে পানি জমা।

আরো খবর



গ) স্থায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা

১) মাংসপেশিতে ব্যথা বা শক্ত চাপ অনুভব করা;
২) স্নায়ু ও মাংসপেশিনির্ভর রিফ্লেক্স কমে যাওয়া;
৩) বধিরও হতে পারে;
৪) বিষণ্ণতা ও মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা;
৫) মাংসপেশির টান কমে যাওয়া।

ঘ) চর্ম বা ত্বকের সমস্যা
    ১) শুষ্ক, খসখসে ও ব্যাঙের ত্বকের মতো হয়ে যাওয়া;
    ২) ভিটিলিগো নামক এক ধরনের শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হওয়া;
    ৩) চর্মে মিক্সিডিমা নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া।

ঙ) প্রজননতন্ত্রে সমস্যা
    ১) মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত হওয়া;
    ২) বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া;
    ৩) প্রজননে অক্ষমতা।

চ) পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা
    ১) পায়খানা শক্ত হওয়া;
    ২) পেটে পানি জমতে পারে।

হাইপোথাইরয়েডিজম হলে শিশুদের বেলায় অবর্ধনজনিত রোগ বা ক্রিটিনিজম হবে এবং উঠতি বয়স্কদের বা প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা হয়। ক্রিটিনিজমের লক্ষণগুলোর মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো- মাংসপেশি ও হাড় এবং স্নয়ুতন্ত্রের সঠিক বর্ধন না হওয়া। এর ফলে শিশু বেঁটে হয়, বোকা বা বুদ্ধিহীন হয়ে থাকে। জিহ্বা বড় হবে ও মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এবং নাভির হার্নিয়া হয়। হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অটোইমিউন ধ্বংসপ্রাপ্ত, ওষুধ, টিএসএইচ স্বল্পতা ও গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতা ইত্যাদি।

কম হরমোনের চিকিৎসা

রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন। তবে অধিকাংশ রোগীই ভোগেন হাইপোথায়রয়েডিজম অর্থাৎ তাদের থায়রয়েড গ্র্যান্ড থেকে কম পরিমাণ থায়রয়েড হরমোন থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়। এ ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডাক্তাররা তাদের থাইরক্সিন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে ১০০ থেকে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাইরক্সিন দেওয়া হয়।

ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে কিনা, তা রোগের ধরনের ওপর নির্ভরশীল। যার থাইরক্সিন ঘাটতি সামান্য বা উপসর্গও কম, তার সারা জীবন ওষুধ খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৬ মাস থেকে ২ বছরেই সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। অনেক ওষুধ ছাড়াও সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু যার একেবারেই থাইরক্সিন নিঃসরণ হয় না বা কোনো কারণে থায়রয়েড গ্রান্ডটিকেই কেটে বাদ দিতে হয়েছে, তাদের সারা জীবন ওষুধ না খেয়ে উপায় নেই।


আরো পড়ুন : কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন ( মধ্যম পন্থাই হলো উত্তম পন্থা। 


ওষুধ খাওয়া হঠাৎ বন্ধ করা সম্পর্কিত বিষয়

ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। তবে নিজের ইচ্ছায় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলে অল্প দিনের মধ্যেই রোগটা ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসবে। জীবন সংশয় হতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ শরীরে স্বাভাবিকভাবে যেটুকু থাইরক্সিন হরমোন থাকা দরকার, সেটি নেই বলেই তো বাইরে থেকে তা গ্রহণ করতে হয়। এক কথায় ঘাটতি পূরণ। সারা জীবন খেলেও কোনো অসুবিধা হয় না।

রক্ত পরীক্ষা

চিকিৎসা চলাকালীন বছরে অন্তত একবার রক্তে থাইরক্সিন বা T4 এবং TSH পরীক্ষা করান প্রয়োজন।


আরো পড়ুন–


No comments:

Post a Comment